নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী পর্যটন মোটেলে মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি মদপান করে মাতালি করেছেন। তারা পর্যটন মোটেলে বারের মধ্যে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছেন। তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে একটি মহল। গতকাল বুধবার দুপুরে বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়।
যদিও ওই দুই ছাত্রনেতাসহ চারজনকে আটকের পর মঙ্গলবার বিকেলেই তড়িঘড়ি করে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ।
মদ্যপ অবস্থায় ভাংচুরের অভিযোগে আটককৃত ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম জনি (৩০)। তিনি রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তার বাবার নাম একতার হোসেন। তার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকায়।
অপরজন হলেন- রাজশাহী মহানগর ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জুয়েল (২৮)। তার বাবার নাম মোসলেম উদ্দিন। তার বাড়ি মহানগরীর উপভদ্রা এলাকায়। একই ঘটনায় দুই ছাত্রনেতার দুই সহযোগীকেও ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- জসিম (২৩) ও তারেক (২২)। জসিমের বাবার নাম আবদুল হামিদ এবং তারেকের বাবার নাম মাহবুবুর রহমান। দু’জনের বাড়িই মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকায়।
পুলিশ জানায়, গত সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জনি এবং মহানগর ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জুয়েল মদপান করতে যান। অথচ ছাত্রলীগ নেতার মদপানের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতরের কোনো লাইসেন্স নেই। তবে ছাত্রমৈত্রী নেতার লাইসেন্স রয়েছে।
এক লাইসেন্সে দুই দলের দুই নেতা মদপান করেন। এরপর তারা মাতাল হয়ে অপর এক খদ্দেরের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় বারের কর্মচারীরা তাদের নিবৃত্ব করার চেষ্টা করেন। এ সুযোগে ওই খদ্দের বার থেকে চলে যান। তখন এ দুই নেতা মোটরসাইকেল নিয়ে তাকে ধাওয়া করেন। কিন্তু ধরতে না পেরে তারা বারের কর্মচারীদের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হন।
এ সময় ওই দুই নেতা বলেন, বারের কর্মচারীদের কারণেই বাইরের লোকেরা তাদের মুখের ওপর কথা বলে চলে যেতে পেরেছেন। এরপর ওই দুই নেতা ক্ষোভে বারের কর্মচারীদের ওপরে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে তারাও সটকে পড়েন। তখন এ নেতারা ফোন করে আরও ১০-১২ জন কর্মীকে ডেকে আনেন। তারা এসে একযোগে বারের দরজা জানালা ও মদপানের গ্লাস ভাংচুর করতে শুরু করেন। বিপদ বুঝতে পেরে বারের ব্যবস্থাপক আবদুর রাজ্জাক নিকটবর্তী রাজপাড়া থানায় ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ ফোন ধরতে দেরি করায় তিনি সরাসরি রাজপাড়া থানায় গিয়ে পুলিশ নিয়ে আসেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুই নেতাসহ চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
এ ঘটনায় বারের ব্যবস্থাপক আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে রাজপাড়া থানায় দুইটি মামলা করেন। একটি মামলা মদপান করে মাতলামি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরটিতে মোটেলের বারে ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বলেন, জনি তাদের সহ-সভাপতি। এর আগেও তিনি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাদের অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রমৈত্রীর মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বলেন, ছাত্রমৈত্রীর মহানগর শাখার সভাপতির মাতলামির ঘটনাটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। এটা জাতির জন্যও দুঃখজনক।
এদিকে, লাইসেন্স ছাড়াই ছাত্রলীগের নেতা কিভাবে মদপান করলেন জানতে চাইলে বারের ব্যবস্থাপক আবদুর রাজ্জাক বলেন, লাইসেন্সধারী একজন আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে মদপান করতে পারেন।
কিন্তু রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, বারে গিয়ে মদপান করতে হলে প্রত্যেকেরই ‘পারমিট’ থাকতে হবে।
মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন খান জানান, তারা দুই নেতার পরিচয় জানতে পেরেছেন। অন্যদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা জানতে পারেননি। দুইটি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
খবর২৪ঘন্টা/এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০