নাটোর প্রতিনিধিঃ সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মীম (১৩)। মাত্র চার দিন আগে স্কুল ছাত্রী মীমকে বাল্যবিয়ের মতো কঠিন অধ্যায় মেনে নিতে হয়েছিল। পরিবারের চাপে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় তাকে। কিন্তু মেহেদির রঙ না শুকাতেই মীমের সেই স্বপ্নের পরিণয় ঘটলো জীবন দিয়ে।
নাটোরে গুরুদাসপুর উপজেলার ধারবারিষা ইউনিয়নের ঝাউপাড়া জোলাগাড়ি গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাড়ির পাশের ডোবায় পাওয়া গেল মীমের অর্ধগলিত প্রাণহীন নিথর দেহ। এঘটনায় রাতেই মীমের স্বামী ফরহাদ (১৮), তার সহযোগী তফের উদ্দিন (৪৫), তফের উদ্দিনের স্ত্রী শুকজান ওরফে সুখী বেগম (৩৫) ও ফরহাদের প্রথম স্ত্রী ইমা খাতুন (১৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঘটনায় ওই চারজনকে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন মীমের বাবা মনিরুল ইসলাম (৪২)।
নিহত মীমের স্বামী ফরহাদ মঙ্গলবার রাতে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, মীমের সাথে বিয়ের আগেও প্রায় আট মাস আগে তিনি বড়াইগ্রাম উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তফের উদ্দিনের মেয়ে ইমা খাতুনকে (১৮) প্রথম বিয়ে করেন। তাদের মধ্যে বনি বনা না হওয়ায় প্রায় ছয় মাস আগে ওই স্ত্রীকে তালাক দেন। এরপর গত ২২মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে মীমের সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন প্রথম স্ত্রীর বাবা-মা তাকে দ্বিতীয় স্ত্রী মীমকে তালাক দিয়ে পুনরায় ইমা খাতুনকে বিয়ে করার জন্য জমিজমাসহ অর্থনৈতিক প্রলোভন দেখান। ওই প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে মীমকে তালাক দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করতে থাকেন তিনি। এতে মীম রাজি না হওয়ায় সাবেক শ্বশুর তফের উদ্দিন, শাশুড়ি শুকজান বেগম ও প্রথম স্ত্রী ইমা খাতুন মিলে মীমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশটি পাশের ডোবায় পুতে রাখেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গুরুদাসপুর পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মীমের বাড়ি উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের হামলাইকোল গ্রামে। বাবা পেশায় দিনমজুর। আকস্মিকভাবেই গত ২২ মার্চ রাতে মীমকে বাল্য বিয়ের শিকার হতে হয়। ঝাউপাড়া জোলাগাড়ি গ্রামের তৌহিদ আলীর ছেলে ফরহাদের (১৮) সাথে বিয়ে হয় মীমের। বিয়ের রাত থেকেই মীমের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। সর্বশেষ বিয়ের চার দিনের মাথায় রবিবার রাতে মীমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর লাশটি বাড়ির পিছনের ডোবায় পুতে রাখা হয়।
নিহত মীমের বাবা মনিরুল ইসলাম জানান, বিয়ের চার-পাঁচ দিনের মাথায় সোমবার মেয়েকে দেখতে যান। কিন্তু জামাই ফরহাদ তাকে জানান তার মেয়ে সাবেক প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে। বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। একারণে গুরুদাসপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে পুলিশ মঙ্গলবার জামাই ফরহাদকে আটক করে ঘটনার সত্যতা পান।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ কুমার দাস জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফরহাদসহ তার প্রথম স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশটি রাতেই মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০