আবু মুসা, বড়াইগ্রাম (নাটোর):
সর্বশেষ ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাটোর- ৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য। এরপর থেকে টানা ১২ বছর বিএনপি ক্ষমতায় নেই। আর নির্দলীয় তত্তাবধায়েকের দাবীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে পাঁচ বছর সংসদেও নেই দলটি। তার ওপর দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া,ছেলে তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীরা হামলা-মামলা ও পুলিশি নির্যাতন এবং গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি এখন কানঠাসা। দলের দুর্দিনে নিজেকে সামলাতে এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য
অধ্যাপক এম মোজাম্মেল হক এলাকা ছাড়া হয়ে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। এতে করে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী সংকট দেখা দেয়ায় জেলা বিএনপি সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে নাটোর-৪ আসনে প্রার্থী করার দাবি উঠেছে। ইতিমধ্যে তার পক্ষে প্রচারনায় নেমেছেন নির্বাচনী এলাকা গুরুদাসপুর বড়াইগ্রাম উপজেলা-পৌর বিএনপির ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। শুধু নেতা নয় মাঠ পর্যায়ের বিএনপি সমর্থক ভোটারের চাওয়া এ আসনের স্থানীয় প্রার্থী পরিবর্তনই পারে বিএনপি’র আসন পুনঃরুদ্ধার করতে। মাঠ পর্যায়ের
নেতা-কর্মিদের দাবী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে দিয়েই কেবলমাত্র এ আসন পুনঃরুদ্ধার সম্ভব। তার পক্ষে সকল নেতা-কর্মী একতাবদ্ধ।এলাকার উন্নয়ন ও নেতা-কর্মীদের সমস্যা সমাধানে সবার আস্থা ও নির্ভরতারস্থল দুলু। তিনি এ আসনে প্রার্থী হলে সকল উপদলীয় কোন্দল নিরসন সম্ভব। অন্য কেউ দলীয় প্রার্থী হলে তাকে নিয়ে নির্বাচনী বৈতরনী পার করে জয়ী করা সম্ভব নয়। আর দল দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলেও তারা মত দেন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান শাহ্ মারা যাওয়ার পর দলের হাইকমান্ড নাটোর জেলা বিএনপি সাবেক মেয়র আমজাদ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে। তিনি মুলদলসহ সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। তিনি এ আসনের প্রার্থী হিসেবে দলের যোগ্য, শক্তিশালী ও জনপ্রিয় নেতা
হিসেবে নাটোর জেলা বিএনপি সভাপতি এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে দলীয় প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন।দুই উপজেলা-পৌর বিএনপি’র একাধিক নেতা জানান, সাবেক সংসদ সদস্য এম মোজাম্মেল হক এলাকা ও দলীয় কর্মকান্ডে অনুপস্থিত। অপর দিকে গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ তার অনুগত ও পকেট কমিটি গঠনের কারনে দলকে বিভক্ত করে ফেলেছেন। ত্যাগী ও নিবেদিত প্রান কর্মীদের বাদ দিয়ে তার পকেট কমিটিতে তার ব্যাক্তিগত পছন্দের ব্যক্তিদের স্থান
দেওয়ার কারনে অনেকে দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিজেদের আড়াল করে রেখেছেন। তিনি তার চেয়ারম্যানের পদ ধরে রাখতে ও মামলা থেকে বাঁচতে আওয়ামীলীগের সাথে লিয়াজো করে চলেছেন এমন ধারনা স্পষ্ট। এছাড়াও আব্দুল আজিজ দলের সভাপতি হয়েও ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়া এবং বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে না থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে আরও ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। অন্যদিকে বড়াইগ্রামের জনপ্রিয় প্রার্থী একরামুল হকের মৃত্যুতে ওই
উপজেলাতেই সাংগঠনিক কার্যক্রমে পড়েছে ভাটা। এসব কারণে দুই উপজেলায় বিএনপি নেতৃত্বে সংকট বেড়েছে এবং দেখা দিয়েছে প্রার্থী জটিলতাও। গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মো. আমজাদ হোসেন বলেন, গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজ দলীয় নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে আগামী নির্বাচনে নিজেই প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে তৃণমূলের পকেট কমিটি গঠন ও দলের
নেতাকর্মীদের দুরত্ব সৃষ্টি অশোভন আচরণের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন। উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি নাজমুল করিম নজু বলেন, বিএনপি দীর্ঘ দিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম মোজাম্মেল হক এলাকায় থাকেন না। উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। এসব কারণেই দলের ভেতরে কলহ নিরসনে জেলা বিএনপির
সভাপতি অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে এই আসনে প্রার্থী করার দাবি তাদের সবার। গুরুদাসপুর পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মশিউর রহমান বাবলু বলেন, আমি নিজেও এ আসনে মনোনয়ন চাইব। তবে দলের সাংগঠনিক অবস্থা বিবেচনাও কোন্দল নিরসনে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এ আসনে প্রার্থী হলে বিভেদ ভুলে তাকে জয়ী করা সম্ভব। গুরুদাসপুর পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দুলাল সরকার মনে করেন, বিএনপি দীর্ঘ
দিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। সেই সুযোগে সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম মোজাম্মেল হক ও পৌর বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমান বাবুলও এলাকায় থাকেন না। উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ নানা কারণে দলে বিতর্কিত। তাদের কারণেই অন্তর্কলহে দলটি কার্যত বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে এই আসনে প্রার্থী করার কথা ভাবছেন সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তারা মনে করেন, দুলু প্রার্থী হলে এই এলাকায় দল আগের চেয়ে আরও সুসংগঠিত হয়ে উঠবে। বড়াইগ্রাম উপজেলা
বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো. হযরত আলী বলেন, বড়াইগ্রামের রাজনীতি অধ্যক্ষ একরামুল নির্ভরশীল ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক সাংসদ এম.মোজাম্মেল হক খোঁজ খবর রাখছেননা। আগামী নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব দেওয়া এবং প্রার্থী হওয়ার মত যোগ্য নেতার অভাব রয়েছে। বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতির নির্দেশনায় সাংগঠনিক ও দলীয় কার্যক্রম চলছে। জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ছাড়া এই আসনে হাল ধরার মত কেউ নেই।
খবর ২৪ঘণ্টা/এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০