নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় ইউপি সদস্যের জিম্মায় মমিনুর ইসলাম (২৫) নামে এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি স্থানীয় ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মোরশেদ আলীর যোগসাজসে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
নিহত মমিনুর ইসলাম ইউনিয়নের চকবিনোদ গ্রামের মামুনের ছেলে। গত ৫ জুন একই ইউনিয়নের মদনচক গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রথম স্ত্রী মৌসুমি ও এক ছেলে সন্তান থাকার পরও মমিনুর ইসলাম দুই বছর আগে গোপনে জুলেখা নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে পরিবারে কলহ শুরু হয়। এরপর দুই স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান তিনি। গত রমজানে আবারও তারা স্বপরিবারে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন। ঈদের একদিন পর মমিনুর দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখাকে নিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি চলে যান।
গত ৪ জুন প্রথম স্ত্রী মৌসুমি তার স্বামীকে নিতে যান। কিন্তু এ সময় জুলেখা তাকে নির্যাতন করে। পরে স্থানীয়রা মমিনুর ও মৌসুমিকে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। পথিমধ্যে ভোলাবাজার নামক স্থান থেকে জুলেখা ও তার মা আঞ্জুয়ারা বিবি আবারও মমিনুরকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে মদকচক গ্রামের ইউপি সদস্য মোরশেদ আলীর বাড়িতে যান। ওই ইউপি সদস্য সম্পর্কে জুলেখার ফুফাতো ভাই।
এদিকে মমিনুরের বাবা মামুন ওই ইউপি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সময় মতো বাড়িতে পৌঁছে দেবে বলে জানানো হয়। কিন্তু পরদিন ৫ জুন মদনচক গ্রামের মাঠে মেম্বারের বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে মেহগনি গাছে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে থাকতে দেখা যায় মমিনুরকে।
এদিকে ওই ইউপি সদস্যের দাবি, ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে মমিনুর, তার স্ত্রী ও শ্বাশুড়ি তার বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। এরপর তিনি তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান।
তবে স্থানীয়দের দাবি বিকেল ৪টা পর্যন্ত মেম্বারের বাড়িতে তারা সবাই ছিল। গিয়াস নামে এক ব্যক্তি মাগরিবের পর গ্রামের জমিলার দোকানের পাশে মেম্বারকে টাকা নিতে দেখেছেন।
নিহতের বাবা মামুন বলেন, মেম্বারের জিম্মায় ছেলেকে রাখা হয়। বিকেলে আমার বাড়িতে ছেলেকে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। অথচ বিকেলে মেম্বারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন ছেলে চলে গেছে। মেম্বারের বাড়িতে রাতে ছেলের দ্বিতীয় বউ ও শ্বাশুড়ি ছিল। ছেলের দ্বিতীয় বউয়ের একাধিকবার একাধিক স্থানে বিয়েও হয়েছিল। মেম্বারের পরিকল্পনায় তার ছেলেকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, হাঁটু ভাঁজ হয়ে তার ছেলের পা মাটিতে ঠেকে ছিল। যদি তার ছেলে কোনো স্থান থেকে হেঁটে ওই গাছের নিচে আসত তাহলে পায়ে ও জুতায় ধুলাবালি লেগে থাকত। জুতা ও পায়ের নিচের অংশ পরিষ্কার ছিল। পরিকল্পিত ভাবে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় গৌতম মাঝি বলেন, গত ৫ জুন ভোরে দু’জন মহিলা আত্রাই নদীর বানডুবী ঘাটে আসে। তারা তাদের বাবার অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে দ্রুত নদী পারাপার করে দিতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি পার্শ্ববর্তী এলাকায় মমিনুর নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে। যে দু’জন ওইদিন তাড়াহুড়া করে নৌকা পার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখা ও অপরজন তার মা আঞ্জুয়ারা ছিলেন।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোরশেদ আলী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। আদালতের মাধ্যমে বোঝাপড়া করতে চান তিনি।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ইউপি সদস্য মোরশেদ আলীসহ তিনজন এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে এর সঠিক রহস্য জানা যাবে।
খবর২৪ঘন্টা/নই
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০