দেশের বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় আজ।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা হবে। দেড় বছর ধরে চলা এই মামলার দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে গত ১২ জানুয়ারি এ মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।
এ মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
ইউটিউব চ্যানেল ‘জাস্ট গো’-এর জন্য কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট, মেরিন ড্রাইভের পাশে পাহাড়, পর্বত ও সমুদ্রের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ভিডিও চিত্র ধারণ করতে এসেছিলেন মেজর অব. সিনহা এবং তার দুই সহযোগী সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথ। টেকনাফের বাহারছরার মারিশবুনিয়া এলাকার মুইন্যা পাহাড়ে তথ্যচিত্র নিমার্ণের শুটিং শেষে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে রিসোর্টে ফেরার পথে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। এ সময় আটক করা হয়েছিল সিনহার সহযোগী সিফাতকে। তল্লাশি চালানো হয় সিনহা যে হোটেলে থাকতেন নীলিমা রিসোর্টে। ওই হোটেল থেকে আটক করা হয় অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় ১টি ও রামু থানায় ২টিসহ তিনটি মামলা দায়ের করে।ঘটনাটি সারাদেশেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যৈষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ সময় আসামি করা হয়, টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ পুলিশের ৯ সদস্যকে। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেন কক্সবাজারের র্যাব-১৫’কে।
এ ছাড়াও পুলিশের করা ৩টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব-১৫। এদিকে ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর ২০২০ সালের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।
আইনের আওতায় আসা ১৫ আসামির মধ্যে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব ছাড়া বাকী ১২ জন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর জ্যৈষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি 'পরিকল্পিত ঘটনা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগপত্রে র্যাব উল্লেখ করে, পুলিশের দায়ের হওয়া মামলা ভিত্তিহীন। পরে আদালত পুলিশের তিনটি মামলা বাতিল করে আদালত।
২০২১ সালের ২৭ জুন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার চার্জ গঠনের মধ্যদিয়ে মামলার বিচার কার্য শুরু হয়। ৮ দফায় গত ৭ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষীর জেরা শেষ হয়। মোট ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হওয়ার পর কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আসামিদের ৫ থেকে ৭ ডিসেম্বর বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। এরপর ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে দুই পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্কের শুনানি। আদালতে ২৮ কার্যদিবসে এই মামলার শুনানি, জবানবন্দি গ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩১ জানুয়ারি মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করেছিলেন আদালত।
এই মামলায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপের পক্ষে আদালতে আইনি লড়াইয়ে সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত। তিনি আদালতে শুনানিতে অংশ নিয়ে বলতে চেয়েছেন সিনহা হত্যাকাণ্ডে ওসি প্রদীপ জড়িত ছিলেন না। মামলার অ্যাভিডেন্স অনুযায়ী ওসি প্রদীপ ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেন। অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত এই মামলায় ওসি প্রদীপকে খালাস প্রদানের দাবি জানান।
এ ছাড়া আসামি লিয়াকতের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার দাশ। তিনি এই মামলায় আসামি লিয়াকতের খালাস প্রদানের দাবি জানান। তবে এ ঘটনায় জড়িত সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেন মামলার বাদী সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেলা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, আদালতের কাছে প্রসিকিউশন মেজর অব. সিনহাকে সুপরিকল্পিত হত্যা করার ঘটনাটি প্রমাণ করতে পেরেছে। আদালত এই মামলায় আসামি প্রদীপ, লিয়াকতসহ সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির রায় ঘোষণা করবেন বলে আশা প্রসিকিউশনের।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর জানান, এই মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য, অ্যাভিডেন্স ও তথ্য-প্রমাণে প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পেরেছে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মেজর অব. সিনহাকে হত্যা করেছে। তাই আশা করি আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন।
বিএ/
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০