খবর ২৪ঘণ্টা ডেস্ক: রাত জেগে ‘ফুটবলের মক্কা’ মজে আছে বিশ্বকাপের আসরে৷ দেখেছে রোনাল্ডো ঝলক৷ পর্তুগীজ তারকার দৃষ্টিনন্দন খেলায় মুগ্ধ মহানগরী৷ নব্বইয় মিনিটের খেলা শেষে অভ্যস্ত নিয়মে ফিরে যায় কলকাতা৷ ময়দানি কূটকচাল আর মোহন-ইস্টের তরজা৷ জনজীবনের এই ছন্দে নিখাদ আরও এক অভ্যাস ধরা পড়ে৷ সেটা সবার অলক্ষ্যেই সেটা পালন করছেন চিনা বংশোদ্ভূতরা৷ সেখানেও জড়িয়ে সুদূর পর্তুগালের স্পর্শ৷ অবাক করা ব্যাপার !
কলকাতার এই চিনা বংশজরা এক পর্তুগীজ চার্চে রোজ হত্যে দেন৷ প্রার্থনা করেন৷ তাদেরই কারোর মনে সেই প্রার্থনায় হয়ত উঠে আসে- প্রভু রোনোল্ডোকে কৃপা করো ! এটাই মহানগরের একমাত্র পর্তুগীজ চার্চের বিশ্বকাপ চলাকালীন ছবি। সেখানে পর্তুগিজদের দেখা নেই৷ তবে খামতিও নেই কলকাতার চিনাদের।
ক্যানিং স্ট্রিট এবং ব্রাবোর্ন ক্রসিং-এর ঠিক মাঝে রয়েছে দুশো বছর পেরোনো পর্তুগীজ চার্চ। কিন্তু সেটা নজরে আসা মুশকিল। কারণ সামনেই হকারদের ভিড়। সার দিয়ে একের পর এক খাবারের দোকান। এভাবেই কোথাও তিলোত্তমার ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে সি আর সেভেনের দেশের চার্চের ঐতিহ্য, ইতিহাস। এই পর্তুগীজ স্থাপত্যের দায়িত্বই এখন কলকাতা ডায়াশেসন ক্লারজির।
১৭৯৯ সালের ২৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল চার্চটির৷ তৎকালীন সময়ে খরচ হয়েছিল প্রায় ৯০ হাজার টাকা৷ অষ্টাদশ শতকের একেবারে শেষ পর্বে কলকাতার ক্যাথলিক খ্রিস্টানরাই এখানে উপাসনা করতে পারতেন। ঐতিহাসিক নথিতে মিলছে সেই সময় পর্তুগীজদের ভিড় লেগে থাকত চার্চে। ভারতে পর্তুগালের উপনিবেশ মুখ থুবড়ে পড়ে ১৯৬১ সালে৷ তীব্র সংঘর্ষ ও প্রবল জন আন্দোলনের ধাক্কায় পর্তুগীজ অধীনে থাকা গোয়া যুক্ত হয় ভারতের মানচিত্রে৷
তারপরেও ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কলকাতার পর্তুগীজ চার্চটি ছিল সম্পূর্ণ সেদেশের অর্থাৎ পর্তুগালের নিয়ন্ত্রণে। এরপর কলকাতার ডায়াশেসন ক্লারজির হাতে সম্পূর্ণ দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয়। সেই শেষ। তারপর থেকে ইউসোবিও-রোনাল্ডোর দেশের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্কই নেই কলকাতার ২০০ বছরের পুরনো চার্চের।
কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইতিহাস মেনে নামটাই শুধু পর্তুগীজ চার্চ রয়েছে। আদতে সে দেশের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্কই নেই। তাঁদের থেকেই জানা গিয়েছে, শহরে অনেক চার্চ এখনও বিদেশ থেকে অনুদান আসে কিন্তু এই চার্চের জন্য কোনও অনুদানই আসে না পর্তুগাল থেকে। হতাশার সুরে চার্চের বর্তমান কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, একমাত্র রোনাল্ডো যদি কোনও সময় কলকাতা আসেন তাহলে হয়তো এই চার্চের কথা কেউ জানতে পারবে। সদস্যরা জানাচ্ছেন, এখানে বর্তমানে যারা উপাসনা করতে আসেন তারা আদতে কলকাতার চিনা বংশোদ্ভূতরা। জনা চল্লিশেক চিনে পরিবার এখনও রয়েছে কলকাতার বুকে।
বিতর্ক থাকলেও ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী কলকাতায় জব চার্নকের আগেই এসে হাজির হয়েছিল পর্তুগিজরা। ১৭ শতকের শুরুর দিকেই তাঁরা এসে হাজির হয়েছিলেন। তখনই তাঁরা একটি ছোট উপাসনা গৃহ বা চ্যাপেল তৈরি করেন। কিন্তু লর্ড ক্লাইভ ১৭৫৭ সালে এসেই পর্তুগিজদের কলকাতা থেকে উৎখাত করেন বলে শোনা যায়। ক্যাথলিক পর্তুগীজ চ্যাপেল রূপান্তরিত হয় অ্যাংলিকান প্রটেস্টান্ট চ্যাপেলে, যা পুরোটাই ব্রিটিশ মনোভাবাপন্ন। পরে পর্তুগীজদের ফের এই শহরে ফিরে আসার অনুমতি দেয় ব্রিটিশরা। সেই ছোট উপাসনাগৃহটিও ফিরে পায় তারা। এরপরে ১৭৯৬ সালে চ্যাপেলটিকে চার্চে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয় পর্তুগাল। তৎকালীন বিখ্যাত পর্তুগীজ ব্যবসায়ী ব্যারেটো ভ্রাতৃদ্বয় অর্থ দান করেন চার্চ গড়তে। সেই অর্থানুকূল্যেই তিন বছর ধরে তৈরি হয়েছিল চার্চটি।
উন্মাদনার শহর কলকাতায় বহু ফুটবল নক্ষত্র এসেছেন৷ পেলে-মারাদোনা-গুলিত- হিগুইতা-অলিভার কান ও মেসি, লিস্ট ক্রমেই বেড়েছে৷ কিন্তু আসা হয়নি সি আর সেভেনের৷ হয়ত তাঁর সফরে ভিক্টোরিয়ার অপূর্ব স্থাপত্যের পাশাপাশি থাকবে তাঁর দেশের রীতিতে তৈরি চার্চ৷ মহানগর অপেক্ষায়৷
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০