খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতিবাজদের বিচার চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়ের প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার রোমে ইতালি প্রবাসীদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটুকু বলতে চাই, দুর্নীতি যারা করবে, সন্ত্রাস যারা করবে, জঙ্গিবাদের সাথে যারা জড়িত, তাদের বিচার হতেই হবে। কারণ বাংলাদেশটাকে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা আনতে চাই। বাংলাদেশের উন্নয়ন আমরা চাই। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নত হোক সেটাই আমরা চাই। সেটা সম্ভব যখন দেশে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, স্বজনপ্রীতি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
ইতালি সফরে ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে বৈঠক এবং আইএফএডির পরিচালনা পর্ষদের সভায় যোগ দেওয়ার পর পারকো দেই প্রিনচিপি গ্র্যান্ড হোটেলে ইতালি আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসেন শেখ হাসিনা।
বক্তব্যে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড পেয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নির্বাচন প্রতিরোধ ও সরকার পতনের নামে এই বিএনপি জ্বালাও পোড়াও ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। ২০১৩ সালে ঠিক একইভাবে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে দেয়। এই সময়ে সমানে তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে। প্রায় তিন হাজারের উপরে মানুষকে তারা আগুন দিয়ে ঝলসে দিয়েছে। ওই তিন বছরে প্রায় পাঁচশর কাছাকাছি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। পুলিশ, বিজিবি, সেনা সদস্যকে পুড়িয়ে মেরেছে।
কত অন্যায় তারা করেছে চিন্তা করেন। সারা বাংলাদেশে এই ধরনের তাণ্ডব তারা করেছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যে মামলায় খালেদা জিয়ার শাস্তি হয়েছে সে মামলা কে দিয়েছে? খালেদা জিয়ার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। সেনাবাহিনীর ৯ জন জেনারেলকে ডিঙিয়ে মইন উদ্দিনকে সে সেনাপ্রধান করেছিলে। আর বিশ্ব ব্যাংকে চাকরি করত ফখরুদ্দীন সাহেব, তাকে নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর করেছিল। তাদের দলীয় লোক ইয়াজউদ্দীন সাহেবকে বানালো রাষ্ট্রপতি। ফখরুদ্দীন, মইন উদ্দিন, ইয়াজউদ্দীন তারাই তো তার বিরুদ্ধে মামলা দিল। এ মামলা তো আওয়ামী লীগ দেয়নি।
খালেদা জিয়ার রায়ের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বিএনপি লোকেরা বলে হ্যাঁ মাত্র এতটুকু টাকার জন্য এই শাস্তি দেওয়ার কি দরকার ছিল? এতটুকু মানে দুই কোটি টাকার জন্য এই শাস্তি কেন দেওয়া হলো?
‘টাকাটা কোন এতিমের কাছে গেছে’- এ প্রশ্ন করে তিনি বলেন, যদি খালেদা জিয়া বলতো আমার দুই ছেলে এতিম, তার জন্য রেখেছি। তাও একটা যুক্তি ছিল। সেটাও উনি করেননি। তখন দুই কোটি টাকায় ধানমণ্ডিতে চারটি ফ্ল্যাট কেনা যেত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, টাকার মায়া ছাড়তে পারেননি। নিজের কাছে কুক্ষিগত করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে।
আমার প্রশ্ন, আজকে যারা বিএনপি দরদি, আঁতেলরাও আছে তারা বলে দুই কোটি টাকার জন্য কেন এত মামলা। তাহলে আমার এখানে একটা প্রশ্ন আছে, দুর্নীতির করার জন্য কি একটা সিলিং থাকবে যে এত কোটি পযন্ত দুর্নীতি করা জায়েজ। তারা কি সেটা বলতে চায়? বিএনপি তাহলে একটা দাবি করুক যে এত কোটি পর্যন্ত তারা দুর্নীতি করতে পারবে। সেটা নিয়ে একটা রিট করুক।
সরকার প্রধান বলেন, আদালত রায় দিয়েছে। এখানে আমাদের তো করার কিছু নেই। আর আমরা যদি করতামই তাহলে ১০ বছর তো চলতে দিতাম না। ২০০৮ এ যখন ক্ষমতায় আসলাম, তখনই তো করতে পারতাম। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। এখানে আমাকে গালি দেয়া বা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কী যুক্তি থাকতে পারে আমরাতো সেটা বুঝি না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার দুই ছেলে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। যাদের টাকা আমরা ফেরত এনেছিলাম। উনি (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী হয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেমন করেছেন, তার দুই ছেলে কালো টাকা সাদা করেছেন। আসলো কোথা থেকে এই টাকা। দেশটাকে দুর্নীতির আখড়া করে দিয়েছিল তারা।
জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বলা যায়, সেই সময় ছিল ‘স্বর্ণযুগ’। সবকিছুতে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ২০০১ এ বিএনপি আসলো, আবার সব থেমে গেল। আবার সব খুন, হত্যা, জঙ্গি-সন্ত্রাস, বাংলা ভাই সৃষ্টি এগুলো শুরু হল।
বিএনপির ‘অপকর্মের কারণেই’ ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাষণামলের পার্থক্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন করি দেশের মানুষের। আর বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ভাগ্য ফিরেছে কার?
১৯৮১ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ‘ভাঙা স্যুটকেস ও ছেড়া গেঞ্জি’ রেখে যাওয়ার প্রচারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার পরবর্তীতে আমরা কী দেখলাম? ভাঙা স্যুটকেস জাদুর বাক্স হয়ে গেছে। সেখান থেকে কোকো ১, ২, ৩, ৪ লঞ্চ বের হচ্ছে। সেখান থেকে ইন্ডাস্ট্রি বের হচ্ছে। সেখান থেকে নানান ধরনের সম্পদের পাহাড় গড়ছে দেশে-বিদেশে এবং মানি লন্ডারিং করে যাচ্ছে। আর ছেড়া গেঞ্জির ফুটো দিয়ে ফ্রেঞ্চ শিপন বের হচ্ছে।
শেখ হাসিনা নিজেরে শাসনামলে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, দুর্নীতি করতে আসিনি, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। নিজেদের ভাগ্য না।
বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিজের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মামলা তদন্ত হয়েছিল এবং সেই মামলায় কিছু পায় নাই।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগের বিরুদ্ধে ‘চ্যালেঞ্জ’ জানানোর বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
কানাডার ফেডারেল কোর্ট ঘোষণাই দিয়েছে যে, বিশ্ব ব্যাংকের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি বলতেই পারি, আমি আমার ছোট বোন আমাদের ছেলেমেয়ে কখনও এমন কোনো কাজা করিনি, যাতে বাংলাদেশের মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হতাকাণ্ডের পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করেছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের’ নামে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যাংকে ঋণ খেলাফি সংস্কৃতি, দুর্নীতি ও লুটপাট করার সুযোগ করে দিয়ে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করে দিয়ে সে (জিয়া) তার ক্ষমতাটাকে কু্ক্িষগত করতে চেয়েছিল। এটাই জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১-এ আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। ষড়যন্ত্র করে আসতে দেয় না। তার কারণ ছিল- গ্যাসের মালিক বাংলাদেশ, বিক্রি করবে আমেরিকা আর তা কিনবে ভারত। আমি এই মুচলেকায় সই দিই নাই, এই প্রস্তাবে রাজি হই নাই। খালেদা জিয়া ‘দেশের সম্পদ বিক্রির মূচলেকায় সই দিয়েছিল’ বলেই ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ‘জিয়া ও এরশাদের মতো একই কাজ’।
ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস ফারাজির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী প্রমূখ।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০