খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: ২৮ বছরের প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়েছে। রোববার এটি প্রকাশ হবে।
চূড়ান্ত তালিকায় ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রায় শতাধিক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
এরমধ্যে মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই শেষে প্রকাশিত খসড়া তালিকায় ৫৪ জন, আর বাকি প্রায় ৬৫ জনের মত প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। এ হিসেবে চূড়ান্ত তালিকায় শতাধিক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ‘ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে খসড়া প্রার্থী তালিকা হওয়ার পরও গতকাল পর্যন্ত অনেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। যার কারণে রোববার যে তালিকা প্রকাশ হতে যাচ্ছে, তাতে শতাধিক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এ সংখ্যা ১১৬ বা ১১৭ হতে পারে।’
জানা গেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর ছাত্রলীগের হুমকি, প্রচারণায় বাধা এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের চাপ দেয়ার কারণে এ ধরনের শূণ্যতা তৈরি হয়েছে। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে আসা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করছেন। অনেকেই ক্ষেত্রে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্যও চাপ দেয়া হচ্ছে বলে জানায়।
তারা বলেন, ছাত্রলীগ তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করছে।
এদিকে বিভিন্ন পদে ৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচত হতে যাচ্ছেন যারা প্রত্যেকেই ছাত্রলীগ সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বৈধ প্রার্থীদের তালিকা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে এজিএস পদে ৩ জন, সম্পাদকীয় পদে ২৮ জন এবং সদস্য পদে ২৩ জন রয়েছেন।
১৮টি হলে ১৩টি করে মোট ২৩৪টি পদ রয়েছে।
প্রকাশিত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন- অমর একুশে হল পাঠকক্ষ সম্পাদক তারেকুল ইসলাম, সূর্যসেন হলের পাঠকক্ষ সম্পাদক রেজওয়ানুল ইসলাম, সমাজসেবা সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক সাব্বির হাসান সৌরভ, স্যার এ এফ রহমান হলে বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক মো. আরিফ হোসেন, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে সাহিত্য সম্পাদক কামাল উদ্দীন রানা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাকিল আহমেদ, ইনডোর গেমস সম্পাদক মো. সোহেল রহমান, আউটডোর গেমস সম্পাদক আনন্দ ফকির, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান
হলের সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুল মমিন, কবি জসীম উদ্দীন হলের সংস্কৃতি সম্পাদক ইমাম-উল-হাসান, পাঠকক্ষ সম্পাদক নাসির উদ্দীন, বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক জাহিদ হাসান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. জুলফিকার হাসান, অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক মো. মুনতাছির মমতাজ, বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাছান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক পদে শাহরিয়ার সনেট, ফজলুল হক মুসলিম হলের সংস্কৃতি সম্পাদক মাসুম মিয়া, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের পাঠকক্ষ সম্পাদক মো. শামসুর
রহমান সুইট, বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক ইমরান হোসেন, বিজয় একাত্তর হলের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক সুজন শেখ, বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক বনী ইয়ামিন, শামসুন্নাহার হলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আয়শা আক্তার সুমি, পাঠকক্ষ সম্পাদক বিশাখা দাস ইরা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের রিডিংরুম সম্পাদক সানজিনা ইয়াসমিন, সমাজসেবা সম্পাদক ইসরাত জাহান, বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পাপিয়া আক্তার, অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক রিয়া আক্তার শান্তা, সদস্য পদে রুবাইয়া আক্তার, জান্নাতুল তাজরীন, ইসমত আরেফিন আলো, সুফিয়া কামাল হল সংস্কৃতি সম্পাদক প্রিয়াংকা দে এবং পাঠকক্ষ সম্পাদক ফারহানা শাফরীন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ:
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতারা বিভিন্ন হলে গিয়ে তাদেরকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন এবং প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে না নিলে মারধর করে হল ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন।
একটি হলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুইজন শীর্ষ নেতা হলে এসে আমাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে আদেশ করে এবং বলে ‘ছাত্রলীগ থাকতে কিসের স্বতন্ত্র প্রার্থী?’
এ সময় তার সাথে অভদ্র এবং অশোভন আচরণ করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এস এম হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ:
এদিকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মারধরের অভিযোগকারী শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। হল সংসদে তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মারধরের শিকার শিক্ষার্থী জানান, শনিবার রাত ৯টায় হলে ফেরার পর হল ছাত্রলীগের ৪/৫ জন কর্মী এসে তাকে হলের ১১১ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে রাতভর নির্যাতন করে ছাত্রলীগ। তার মোবাইল, ফেইসবুক আইডি চেক করে। তাকে শিবির বলে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে রাত ১টার দিকে তাকে দিয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর প্রত্যাহার পত্র লিখতে বাধ্য করে।
মাহবুবুর রহমান জানায়, সকাল ১০টায় হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারের নিকট পুরো ঘটনা খুলে বললে তিনি ছাত্রলীগের হল জিএস (সাধারণ সম্পাদক) জুলিয়াস সিজার তালুকদারের কাছে সমর্পণ করে তার দেখভালের জন্য।
এছাড়া, এস এম হলের অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও হুমকি ও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, আমার কাছে এধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। প্রার্থীরা যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেন।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০