খবর২৪ঘন্টা ডেস্কঃ
জাতীয় সংসদে কালো আইন পাসের হিড়িক লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য কনের। রিজভী বলেন, সংসদে কালো আইন পাসের হিড়িক লেগেছে। দেশে একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জনগণের এজলাসে তাদের বিচার করা হবে।
তিনি বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী ভোটারবিহীন সংসদে বলেছেন, যদি জনগণ ভোট দেয় আর আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে আবারও প্রমাণিত হলো তার মন রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ভরা। উনি রাষ্ট্র ক্ষমতা আটকে রেখেছেন জনগণের কল্যাণে নয়, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করাটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, আইনি ব্যবস্থায় প্রতারণামূলক নীতি কার্যকর আছে কেবলমাত্র ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে। সুতরাং সেটিরই প্রতিফলন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। সেজন্য তিনি যা ইচ্ছা তাই করার হুমকি দেন। তিনি বলেন, আপনারা আরও দেখেছেন শুধুমাত্র ন্যায্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার হিড়িক চলছে।
গতকাল তার বিরুদ্ধে চুরির মামলাও দায়ের করা হয়েছে। কতটা অসংস্কৃত ও হিংস্র আচরণ করা যায় তার সবটাই প্রয়োগ করা হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষদের ওপর। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা, মানবধিকার কর্মীরাও আজ সরকারের সহিংস আচরণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তবে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলে রাখি জনগণের এজলাসে বিচারের মুখোমুখি হতে ক্ষমতাসীনরা যেন প্রস্তত থাকে।
রিজভী বলেন, জাতীয় সংসদের বিনা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দ্বারা কালা-কানুন পাসের হিড়িক চলছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদে ভোটারবিহীন সংসদ সদস্যদের এখন পর্যন্ত ২৩টি অধিবেশন বসেছে এর মধ্যে প্রায় দুই শত আইন পাস করেছে তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নিরঙ্কুশ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই এ গণবিরোধী খারাপ আইনগুলো পাস করিয়েছেন।
গত অধিবেশনেও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের কণ্ঠরোধ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৮টি আইন পাস করা হয়েছে। চলতি অধিবেশনেও চলছে নতুন নতুন আইন পাসের তোড়জোড়। মানুষ এখন নিজের ছায়াকে দেখলেই ভয় পায়। ঘুমের ঘোরের কথাতেও আতঁকে উঠে। আজকে গণমাধ্যমে এসেছে আরও আইন পাসের জন্য সংসদের চলতি অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দেশের রাজনীতিসহ গোটাদেশকে কব্জায় নিতে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী এত কালো আইন পাস করে রেকর্ড গড়তে চলেছেন। তাই তিনি নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব তুলেছেন যা, চলতি সংসদে পাস করতে তোড়তোড় চলছে। এর পিছনে যে চুড়ান্ত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা জাতির সামনে পরিষ্কার।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পিতার সৃষ্টি বাকশালকে ব্যর্থ হতে দিতে চান না। তাই ভিন্ন কায়দায়, ভিন্ন পন্থায় মৃত বাকশালকে জীবিত করতে অমৃতপান করানো হচ্ছে এ সমস্ত কালো আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। আইনের মারপ্যাঁচে মূলত তিনি দেশে একদলীয় বাকশালী ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছেন। একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছাড়া দেশে অন্য কারও নেতৃত্ব থাকবে সেটা তিনি মানেত পারছেন না। সংসদে বিরোধী দলও থাকবে তবে সেটি হবে গৃহপালিত, শেখ হাসিনার আদরের ধন।
রিজভী আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় আছেন ততদিন গণবিরোধী কাজের সমালোচনাও করা যাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না, ব্যাংক লুটের কথা বলা যাবে না, অপকর্মের কথা বলা যাবে না, গুম ও গুপ্ত হত্যার কথা বলা যাবে না। গত দুদিন আগে তিনি বলেছেন, ৪০টি টেলিভিশন আমি দিয়েছি অথচ তাদের দিয়ে সবচেয়ে ভুক্তভোগি আমরা।
বিশ্ব যেখানে এগিয়ে চলছে সেখানে গণমাধ্যম এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। গণমাধ্যম দেয়াকে তিনি কি ব্যক্তিগত সম্পদ দেয়ার মতো মনে করছেন যে, তিনি তাঁর নিজস্ব গোডাউন থেকে টেলিভিশন চ্যানেল সরবরাহ করেছেন। অর্থাৎ তিনি টেলিভিশন দিয়েছেন দলীয় চেতনার মানুষদের শুধুমাত্র তার গুনগান করার জন্য। সেখানে কিছুটা ব্যতিক্রম হলেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছেন। এটিই হচ্ছে গণতন্ত্র বিরোধী বাকশালী চেতনা। কিন্তু এ বিশ্বায়নের যুগেতো কোন অপকর্ম, অপকৃর্তি ঢেকে রাখা যাবে না। এখন নর্থপোল থেকে সাউথপোলের খবর এক ক্লিকেই সব জানা যায়।
তাই যতই কালা-কানুন করুন না কেন, মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এ তথ্যপ্রযুক্তির উৎর্কষতার যুগে অনিয়ম, দুর্নীতি, অপকর্ম ঢেকে রাখা যাবে না। গণ-প্রচারযন্ত্র কায়েমি স্বার্থে ব্যবহার করার দিন শেষ হয়ে গেছে। আমি জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আবারও আহবান জানাচ্ছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে মানুষের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন। জাতীয় সম্প্রচার নীতি-২০১৮ এর মতো একের পর এক জঘন্য কালাকানুন তৈরি থেকে সরে আসুন। এসময় তিনি বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের তথ্য তুলে ধরেন।
ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সহ সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, দপ্তর সহ সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম পটু প্রমুখ।
খবর২৪ঘন্টা / সিহাব
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০