নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীতে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৮ বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অব্যবস্থাপনা, অপেশাদার বিচারক নির্বাচন ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রোববার দিনব্যাপি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতের বিচার কার্যে অপেশাদার বিচারক দিয়ে পরিচালনা করা হয়। এর ফলে ফলাফল সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এছাড়া বিচার কার্য পরিচালনায় একজন বিচারকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দেয়া হলেও তারা কোন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে অভিভাবক ও প্রতিযোগিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিচারক নির্বাচনে তিন সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।
এতে ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আসাদুজ্জামান, নাটোর এনএস কলেজের
অধ্যাপক ড. শিখা সরকারসহ আরেকজন কর্মকর্তা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগ ও রাজশাহী বেতারের আঞ্চলিক কেন্দ্রে শিল্পী থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক কে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত ও রবীন্দ্র সঙ্গীতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিচারক নির্বাচন করা হয়।
প্রতিযোগিতার আগের রাতে বিচারকের নাম পরিবর্তন কওে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা বিভাগের শিক্ষকে নির্বাচন করা হয়। এই প্রতিযোগিতার মূল্যায়নের ফলাফলে অভিভাবক ও প্রতিযোগিদের মধ্যে অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ বছর রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মধ্যে রবীন্দ্র, নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) ইতিহাস বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ভাষা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক জুবেলী বিশ্বাস এবং চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও নজরুল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী বেতারের শিল্পী গুল নাহার বেগম কে নির্বাচন করা হয়।
অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, এই তিনটি বিষয়ের সঙ্গীতের প্রতিযোগিতায় অপেশাদার বিচারক নির্বাচন করায় সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় নি। এদের মধ্যে বিচারক টিটিসির শিক্ষক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি প্রতিযোগিতা চলাকলীন বাইরে এসে বগুড়ার প্রতিযোগির ওস্তাদ নিতাই দাসের সাথে বিভিন্ন আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ উঠে।
এছাড়া তিনি অপর একজন নঁওগার প্রতিযোগির ওস্তাদ রতন দাসের সঙ্গে পাশে বসিয়ে চা পান করেন ও সিরাজগঞ্জের প্রতিযোগির ওস্তাদ শ্যামল দাসের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করেন তিনি।
এ ঘটনায় বিভিন্ন প্রতিযোগির অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক আবদুল মান্নান, উপপরিচালক কোমাল হোসেন, গবেষণা কর্মকর্তা সিরাজ, শিল্পকলার কালচারাল অফিসার আসাদুজ্জামানের নিকট তাৎক্ষণিক মৌখিক অভিযোগ দেয়া হয়। প্রাথমে অভিযোগটি আমলে নেয় নি। অনেকক্ষণ পর অভিভাবকদের চাপের মুখে কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের প্রতিযোগিতার রুম থেকে বের করে দেন।
এই তিনটি বিষয়ের পেশাদার বিচারকের পরিবর্তে অপেশাদার বিচারক নির্বাচন করায় এবং একজন বিচারকের পক্ষপাতিত্বের কারণে প্রতিযোগিদের সঠিক মূল্যায়ন না করার অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে বিচারক নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ড. শিখা সরকার বিচারক নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন।
এ বিষয়ে বিচারক নির্বাচনে উপকমিটিতে দায়িত্বে থাকা নাটোর এনএস কলেজের অধ্যাপক ড. শিখা সরকার বলেন, নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য উপরোক্ত তিনজন শিক্ষককে সঙ্গীত বিচারক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক আবদুল মান্নানের সঙ্গে গতকাল রাত পৌনে ৯টায় বেশ কয়েক বার টেলিফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায় নি। এজন্য তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
খবর২৪ ঘণ্টা/এমকে