জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এশিয়া মহাদেশভুক্ত দেশগুলো। অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় এ অঞ্চলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে বেশি। ফলস্বরূপ এই মহাদেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত জাতিসংঘের বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এসব তথ্য।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এশিয়ার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর এশিয়ার গড় তাপমাত্রা ছিল দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
ডব্লিউএমও বলছে, গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টানা ও দীর্ঘ তাপপ্রবাহে একদিকে এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে, অন্যদিকে শুকিয়ে যাচ্ছে জলাশয়গুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের পানি নিরাপত্তা ব্যাপক সংকটের মুখে পড়বে।
মঙ্গলবার প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে ডব্লিউএমওর শীর্ষ নির্বাহী কেলেস্টে সাউলো বলেছেন, ‘এশিয়ার অধিকাংশ দেশের ইতিহাসে ২০২৩ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। বিশ্বে খরা, তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যার মতো যত বিপর্যয় ঘটেছে, সেসবের বেশির ভাগই ঘটেছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। জলবায়ু পরিবর্তনের গভীর প্রভাব ইতোমধ্যে জনজীবন ও পরিবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতিতেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রভাব আরও ব্যাপক হবে।’
ডব্লিউেএমও’র তথ্য অনুয়ায়ী, গত বছর প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ এশীয় অংশের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ। তাপমাত্রা বাড়ছে সাইবেরিয়া থেকে মধ্য এশিয়া ও পূর্ব চীন থেকে জাপান পর্যন্ত। গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে এশিয়ার হিমালয় পবর্তমালা এবং এই পর্বতমালার হিন্দুকুশ ও তিব্বত রেঞ্জের ২২টি হিমবাহের মধ্যে অন্তত ২০টির বরফের মজুত ২০২৩ সালে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের এই প্রভাব ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। চলতি মাসের শুরু থেকেই দেশব্যাপী বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। শুরুতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকলেও ক্রমে তা তীব্র থেকে অতি তীব্র হয়ে উঠেছে। এমনিতে এপ্রিল বছরের উষ্ণতম মাস; তবে অন্যান্য যেকোনো বছরের চেয়ে অনেক বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে এবারের মাসটি। অসহনীয় গরমে এক পশলা বৃষ্টির জন্য হাঁসফাঁস করছে জনজীবন।
মাসের এখনও বাকি সপ্তাহখানেক, এরই মধ্যে কয়েক দফায় হিট এলার্ট জারি হয়েছে দেশে। মাসের মাঝামাঝি এসে প্রতিদিন মরুর দেশগুলোর তাপমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা।
টানা এই তাপপ্রবাহকে অস্বাভাবিক বলছেন দেশের আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেছেন, গত এক দশক থেকেই এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকছে তাপমাত্রা। এপ্রিল মাসের গড় স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.২। তবে এবার এপ্রিলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। অধিকাংশ জায়গায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির ওপরে থাকছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মে মাসের আগে দেশের বেশির ভাগ জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ‘এপ্রিল মাস দেশের উষ্ণতম মাস। তবে কালবৈশাখীর ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হলে ওই দিন বা তার পরদিন তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি সেভাবে হয়নি, ফলে দেশের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিদ্যমান। সামনে দেশের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টিপাতের তেমন সম্ভাবনা নেই। ফলে চলমান তাপপ্রবাহ সহসাই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত আমরা দেখছি না।’
এদিকে জলবায়ুর এ বিরূপ পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবিলা করতে হচ্ছে এশিয়াকে। ২০২৩ সালে এশিয়ায় বড় আকারের ঝড়, বন্যা ও তুমুল বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭৯টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৯০ লাখ।
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এশিয়ার দেশগুলোর আবহাওয়া কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং গ্রীন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাসে জোর দেওয়া হয়েছে ডব্লিউএমওর সবশেষ প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ‘আবহাওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমাতে খানিকটা হলেও সহায়তা করবে। তবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ কমানোর কোনো বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাস কেবল একটি বিকল্প নয়, বরং জরুরি কর্তব্য।
বিএ...
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০