নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শিক্ষা নগরী খ্যাত রাজশাহী জনশূন্য হয়ে পড়েছে। কোথাও যেন কেউ নেই। রাস্তায় আগের মত যানবাহন নেই। নেই মানুষের কোলাহল। বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেও দেখা যায়নি কাউকে। এ যেন এক অচেনা নগরী।
দিনের বেলায় দু-একটি ছোট যানবাহনের দেখা মিললেও দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে জনশূন্যতায় ভরা নগরীতে স্তব্ধতা আসছে। দালান-কোঠা ও আকাশচুম্বী ভবন গুলো আগের মতই আছে। জনশূন্যতায় এ যেন এক ভুতুড়ে নগরী। দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমাতে চলতি মাসের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়। শিক্ষানগরী রাজশাহীর স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে নগর ছেড়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক কোলাহলপূর্ণ এ নগরি ফাঁকা হতে শুরু করে মেসগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আরও বেশি। তারপরও ব্যবসা-বাণিজ্যের ও চাকরির কাজে রাজশাহী মহানগরীতে অবস্থান করা মানুষের কিছুটা অবস্থান ছিল। এরপরেই বন্ধ করে দেয়া হয় দূরপাল্লার বাস চলাচল। রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ট্রেনে চেপে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছিলেন মানুষ। এছাড়াও ছোট খাটো যানবাহন ও গণপরিবহন এবং লোকাল বাস গুলো চলাচল করছিল। এ সময় উত্তরবঙ্গের অন্যতম চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ছোট ছোট প্রাইভেট গাড়ি ও লোকাল বাস গুলোতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছিলেন লোকজন।
করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব কমাতে ও মহামারী থেকে মানুষকে সচেতন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সেনাবাহিনী নামানোর ঘোষণা দেয়া হয় ও ট্রেন চলাচলসহ গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণার পর আস্তে আস্তে জন্য জনশূন্য হয়ে পড়তে শুরু করে রাজশাহী। গত বুধবার থেকে রাজশাহী মহানগরীতে মানুষ যাতে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের না হয় এজন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন এর সমন্বয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য রাস্তায় রাস্তায় সচেতনতামূলক মাইকিং করছেন।
ঔষধ, মুদিখানা, হাসপাতাল ও কাঁচা বাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্তের পর মানুষ আরো কমে যায়। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় ও রাত আটটার পর কোন দোকান খোলা না থাকে এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে বিষয়ে পরে আবার নজরদারি করেছে প্রশাসন।
প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে আরো ফাঁকা হয়ে যায় শিক্ষানগরী খ্যাত এই রাজশাহী। গত শুক্রবার ২৭ মার্চ রাজশাহী মহানগর জুড়ে অন্যান্য দিনের থেকেও আরো কঠোর ছিল প্রশাসন। নগরের বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট কাজ করছিল। বিনা কারণে রাস্তায় কাউকে ঘুরতে দেখলেই পুলিশ তাদের কান ধরে উঠবস করিয়েছে। এ ধরনের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর আরো ফাঁকা হয়ে যায় শহরের রাস্তাঘাট, মার্কেট ও দোকান। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রয়োজনীয় কিছু দোকান ছাড়া অন্যসব মার্কেট ও দোকান পাট বন্ধ রয়েছে এ কারণে নগরজুড়ে খুব কম সংখ্যক মানুষ কে দেখা যায়।
শুধু প্রয়োজনে দু'একজন মানুষ নিজস্ব পরিবহন বা পায়ে হেঁটে চলাচল করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার, জিরো পয়েন্ট, গণকপাড়া, মনিচত্বর, রেলগেট, লক্ষ্মীপুর, কোট স্টেশন মোড়, হড়গ্রাম বাজার, ভদ্রা, নওদাপাড়া আমচত্তর, বিনোদপুর, তালাইমারী সহ এবং শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় যেন সুনসান নীরবতা। নগরজুড়ে এ শূন্যতার কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে যারা রাজধানী ঢাকা থেকে গত ৩-৪ দিন আগে এসেছেন তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেউ এ আদেশ অমান্য করলে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সংশ্লিষ্ট থানাকে বা জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত রাজশাহীতে প্রায় সাড়ে ৫০০ এর উপরে করোনা সন্দেহে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও কেউ আইসোলেশন নেই এবং কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর এবার রাজশাহীতে করোনা সনাক্তের মেশিন পিসিআর বসানো হচ্ছে এই মেশিন বসানো হলে এখন থেকে রাজশাহীতেই করোনার পরীক্ষা করা সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০