খবর২৪ঘন্টা ডেস্ক: ছেলে হত্যার বিচার না পেয়ে বদলা নিতে কুষ্টিয়ায় এমপির ভাই আওয়ামী লীগ নেতা হাসিনুর রহমানকে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ঘাতক মজিবর রহমান বয়াতি। এই হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত নন, তিনি একাই ঘটিয়েছেন বলেও আদালতকে জানিয়েছেন।
এদিকে নিহতের ভাই ও কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সরকার দলীয় সাংসদ অ্যাড. আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশা দাবি করছেন শুধু প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মজিবর এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়নি। এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এর পেছনে বড় কোনো শক্তি জড়িত রয়েছে। নিহত হাসিনুর রহমান ফিলিপনগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের হাতে এক প্রকার স্বেচ্ছায় ধরা দেয়া মজিবর রহমান বয়াতি রোববার কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় প্রদান করা জবানবন্দিতে বলেন, ‘২০১৯ সালের ১২ আগস্ট ঈদুল আযহার দিন বিকেলে পদ্মা নদীর পাড়ে আবেদের ঘাট এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে তার ছেলে স্থানীয় পিকেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আনোয়ারকে (১৫) স্থানীয় আন্টু মেম্বার ও হাসিনুরের হুকুমে কয়েকজন ছেলে ছুরিকাঘাতে খুন করে। সন্তান হত্যার ঘটনায় মজিবর রহমান বয়াতি আন্টু মেম্বারকে আসামি করতে চাইলে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুলিশ আন্টু মেম্বারের নাম বাদ দিয়ে এজাহার রেকর্ড করে। সম্প্রতি দৌলতপুর থানা পুলিশ ওই মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দিলেও সেখানে আন্টু মেম্বারের নাম আসেনি।
মজিবর বয়াতি তার নিজের চায়ের দোকানে বিভিন্ন সময় তার কিশোর ছেলে আনোয়ার হত্যাকাণ্ডের পেছনে আন্টু মেম্বার ও হাসিনুর জড়িত বলে লোকজনকে বলাবলি করতেন। দোষারোপের বিষয়টি জানতে পেরে হত্যাকাণ্ডের আগের দিন গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে এমপির ফুপাতো ভাই হাসিনুর চায়ের দোকানে গিয়ে মজিবর বয়াতিকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর ছেলেকে খুন করেছি, তোকেও খুন করব। যদি তুই মানুষের কাছে আমাকে নিয়ে আবার কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলিস, তাহলে তোকেও গুম করে দেব।’
হুমকি পেয়ে তখন কোনো প্রতিবাদ না করে রাগ সহ্য করে দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। সে সময় তিনি হাসিনুরকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। হত্যার প্রস্তুতি হিসেবে দোকানের ভেতর একটি হাসুয়া লুকিয়ে রাখেন। শনিবার সকালে সুযোগ পেয়ে তিনি ওই হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হাসিনুরকে হত্যা করেন। এই হত্যার সঙ্গে তিনি ছাড়া আর কেউ জড়িত নন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হত্যার পর মজিবর রহমান প্রকাশ্যে স্থানীয় শত শত লোকের সামনে চিৎকার করে বলতে থাকেন সন্তান হত্যার বদলা নিলাম, এখন আমার জেল ফাঁসি যাই হোক তাতে কোনো দুঃখ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র এবং স্থানীয়রা জানান, স্কুলছাত্র অনোয়ার হত্যা মামলার বাদী ও বিবাদী দু’পক্ষই আওয়ামী লীগের হওয়ায় এমপির প্রতিনিধি হিসেবে হাসিনুর রহমান মামলাটি সমঝোতা করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। আপোষ-মিমাংসার জন্য কয়েক দফায় তিনি দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও করেন। সমঝোতার জন্য মজিবর রহমান বয়াতির উপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন হাসিনুর। এ কারণে এমপির ভাই হাসিনুরের উপর আগে থেকেই চরম ক্ষুদ্ধ ছিলেন মজিবর রহমান বয়াতি।
তবে নিহত হাসিনুরের ফুফাতো ভাই কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সরকার দলীয় সাংসদ অ্যাডভোকেট আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশা কোনোভাবেই এই হত্যাকাণ্ডকে নিছক সাধারণ হত্যাকাণ্ড হিসেবে মানতে নারাজ।
তার মতে, এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। মজিবর নিজের বুদ্ধিতে একা এই খুন করেছে এটি কোনোভাবেই মানা যায় না। হাসিনুরকে হত্যার জন্য মজিবরকে অর্থ দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সাহস দেয়া হয়েছে। এর পেছনে বড় শক্তি আছে।
সাংসদের এমন দাবির বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়। সন্তান হত্যার বদলা নিতে এবং ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মজিবর একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সে আদালতেও এমন জবানবন্দি দিয়েছে।
খবর২৪ঘন্টা/নই
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০