পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন ইমরান আলী। ইমরান রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে। ডান পা হারিয়ে নিজবাড়িতে অর্থাভাবে বন্ধ আছে তার চিকিৎসাসেবা। এদিকে দুই বছরের ছোট্ট শিশু ফাতেমা বাবার ভালোবাসা পেতে বারবার কোলে উঠতে চায়। কিন্তু আন্দোলনে পা হারানোর কারণে মেয়েকে পর্যন্ত কোলে নিতে পারে না ইমরান হোসেন।
ইমরান ঢাকায় ‘টপওয়ান’ নামে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা মিরপুর-১১ থেকে গাড়ি না পেয়ে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে মিরপুর-১০ নম্বরে পুলিশের ছোঁড়া গুলি লাগে ইমরানের ডান পায়ে।
মিরপ-১০ নম্বরে গুলি লাগলে পড়ে থাকা ইমরানকে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজন মিরপুরের আলোক হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাসেবা নিয়েও বাঁচানো যায়নি ইমরানের পা। অবশেষে কেটে ফেলতে হয়েছে।
এদিকে প্রায় ২০দিন আগে ইমরানকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ায় তিনি চলে আসেন নিজ বাড়িতে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ইমরানের এমন পরিস্থিতিতে চলছে না সংসার। বন্ধ আছে তার চিকিৎসাসেবাও। এতদিন ধার দেনা করে চিকিৎসা চালালেও এক পা হারিয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
ইমরানের বাবা সোহরাব আলী বলেন, আমার ছেলে আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পা হারিয়েছে। আমার সংসার শেষ হয়ে গেছে। আমার ছেলের জীবন বাঁচাতে আপনারা সবাই সহায়তা করেছি। এখন আমরা তার চিকিৎসা নিতে সবার সহযোগিতা চাই।
ইমরান হোসেন বলেন, ১৯ জুলাই বাইরে আন্দোলন চলছিল বিষয়টা আমি বুঝতে পারিনি। অফিস শেষ করে সন্ধ্যা ৭টায় মিরপুর-১১ থেকে গাড়ি না পেয়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরে পৌঁছাতেই দেখি ছাত্ররা আন্দোলন করছে। এ সময় হঠাৎ মনে হলো আমার পায়ে কেউ যেন ইটের টুকরা দিয়ে আঘাত করল। কিছুক্ষণ পর দেখি রক্তে ভিজে গেছে।
তিনি বলেন, পরে বুঝতে পারলাম পায়ে গুলি লেগেছে এবং আমার সামনে আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। ঢাকায় চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমার সংসারও চলছে না আবার চিকিৎসা সেবাও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। এতদিন কাছে থাকা কিছু টাকা ও ধার দেনা করে চিকিৎসা চালিয়েছি। এখন আর পারছি না। চিকিৎসা চালাতে সহায়তার জন্য পুঠিয়া ইউএনও স্যার বরাবর একটি আবেদন করেছি। আমি বাঁচতে চাই আমাকে আপনারা বাঁচান।
ইমরান হোসেন বলেন, আমি ভাবতে পারি না যে আমার পা নেই। মাঝে মধ্যে ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে বসি। আমার হাত যখনই ডান পায়ের দিকে যায় তখন কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে দেখতেও আসেনি, কোন চিকিৎসা সেবাও দেয়নি। আমি চাই আমাকে সরকার সহযোগিতা করুক। তা না হলে আমার ভবিষ্যৎ জীবনে স্ত্রী ও দুই সন্তান এবং বৃৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে দিন পার করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ, কে, এম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, একটি মানবিক সাহায্যের আবেদন পেয়েছি এবং সেটা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অফিসে পাঠিয়েছি। সরকার বর্তমানে শহীদদের তালিকা করছে। পরবর্তীতে আহতদের তালিকা করার সময় বিষয়টি দেখা যাবে।
বিএ..
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০