রাবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের অনুষ্ঠিতব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ১১ ও ১২ মে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদ প্রত্যাশীরা। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিচ্ছেন পদ প্রত্যাশীরা। এমনকি আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতারাও চেষ্টা চালাচ্ছেন পছন্দমত ব্যক্তিকে পদে নিয়ে আসতে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, নিবার্চনী আমেজ শুধু ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগরবিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা কলেজ। দেশের অন্যতম বৃহত্তম বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন মফস্বল অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীদের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়নি। যার ফলে সম্মেলনের দৃশ্যমান কোন আমেজ মফস্বল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীদের মাঝে লক্ষ্যে করা যাচ্ছে না। বরং ঢাকার বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে এক রকম চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
তাদের অভিযোগ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে শুধু ঢাকার নেতাকর্মীদের মূল্যায়ণ করা হয়। ঢাকার বাইরে হওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়মিত ধর্ণা দেওয়া হয়না তাদের। তাই মফস্বলের ত্যাগী নেতাদের সন্তুষ্ট করতে নামে মাত্র পদ দিয়েই সন্তুষ্ট রাখা হয়। তাও আবার কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করার সময় না। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মেলনে প্রত্যাশা অনুযায়ি পদ দিতে না পারাই পরবর্তীতে তুষ্ট করার জন্য কেন্দ্রীয় সদস্য পদ দেওয়া হয়। আর বাইরের যোগ্য, দক্ষ, ত্যাগী নেতা থাকলেও তাদের বঞ্চিত করা হয়। তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি বলছে ত্যাগী, সংগঠকদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে আওয়ামীলীগের উচ্চপর্যায় থেকে তিন নেতাকে নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে শীর্ষ পদের মধ্যে একটি আসতে পারে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গকে বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। কেননা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজশাহী ও বরিশাল কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে নেতৃত্বে আসেনি।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, বড় বড় এই তিন ক্যাম্পাস থেকে প্রতিপক্ষের নির্যাতন, পঙ্গুত্ববরণসহ বিভিন্ন নির্যাতন মোকাবেলা করে বিগত দুই যুগে মাত্র ৫ জন কেন্দ্রীয় কমিটির কথিত গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। যাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র দুই জন। যা মোট পদের শূণ্য শতাংশ হিসেবে ধরা যায়। অপরদিকে ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর নেতাকর্মীরা সংগঠনের জন্য কোন রকম ত্যাগ ছাড়াই কেন্দ্রীয় কমিটির শতভাগ গুরুত্বপূর্ণ পদ অনায়াসেই পেয়ে থাকেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়:
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান শিখর ১৯৯৪ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্থান পায়। দীর্ঘ বিশ বছর পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে জায়গা পায় তৎকালীন রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু হোসাইন বিপু।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের যতগুলো ক্যাম্পাস রয়েছে তারমধ্যে ছাত্রলীগ করতে গিয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসের নেতাকর্মীদের। যোগ্য নেতৃত্ব থাকা সত্বেও মফস্বল হওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা হয়না আমাদের। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ণ করা আহবান জানান তারা’।
পরে রাজশাহী অঞ্চল থেকে গত সম্মেলনে সহ-সভাপতি পদে জায়গা মিলে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়ে অনিকা ফারিহা জামান অর্ণার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
২০০১ সালে মহসিন করিম রিয়াল সহ-সভাপতির পদ পান। তার পর থেকে এ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা মিলনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দদের।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আলমগীর টিপু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সম্মেলন শুধু ঢাকার কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ে কমিটি গঠন করা উচিৎ নয়। দেশের সকল ইউনিটের নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হলে সংগঠনটি আরও গতিশীল হবে’।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়:
সর্বপ্রথম ২০০৯ সালে ইসলামীবিশ্ববিদ্যালয়র থেকে সাজ্জাদ হোসেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকে পদ পান। জাহাঙ্গির হোসেন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তবে ২০১১-২০১৫ পর্যন্ত বদিউজ্জামান সোহাগ ও নাজমুল আলমের কমিটিতে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ দিকে শামীম হোসেন বর্তমান কমিটির উপ ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে কখনও দেখা মেলেনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়র নেতাকর্মীদের।
এ ব্যাপারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘ঢাকায় অবস্থানের কারনে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এবং বড় বড় নেতাদের সাথে যোগাযোগের কারণে অযোগ্য হওয়া সত্বেও তারা কেন্দ্রে জায়গা পায়। আমরা যতই দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করিনা কেন আমাদের টা তাদের নজরেই আসে না ও মূল্যায়ণ হয়না’।
সম্মেলনের সার্বিক বিষয়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০