ওমর ফারুক : সরকার কর্তৃক স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা দিয়ে লকডাউন শিথিল করে মার্কেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের পর চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহী। এখন রাজশাহী মহানগরীতে গণপরিবহন ব্যতীত প্রায় সব ধরনের যান চলাচল রয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহানগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন বাজার, মার্কেট ও ব্র্যান্ডের শোরুমগুগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। সরকারের পক্ষ থেকে মার্কেট শপিং মলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব স্বাস্থ্যবিধি
মানার বিষয়ে সচেতন করার শর্তে দোকান খুলে দিলেও তা মানা হচ্ছে না রাজশাহী মহানগরীর কোন মার্কেটেই। এজন্য বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। যদিও গত ১৫ মে শুক্রবার রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে যৌথসভায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে সব মার্কেট বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ নির্দেশ অমান্য করে গতকাল শনিবার রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আরডি মার্কেট, কাপড় পট্টির মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট খোলা রেখে বেচাকেনা অব্যাহত রাখে। কিন্তু এসব মার্কেটে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছেনা। একই দিন রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া এবং সংশ্লিষ্ট মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
জানা যায়, দেশে চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে ১৭ ই মার্চ থেকে রাজশাহীসহ দেশের সরকারী-বেসরকারী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার যানবাহন, গণপরিবহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। একই মাসে ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। তারপর থেকেই বাড়ছে সাধারণ ছুটির মেয়াদ। বিভিন্ন জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর নিজ নিজ জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মানুষকে সচেতন করতে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এখনো সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। শুরুর দিক থেকে মানুষ ঘরের মধ্যে থাকলেও লকডাউন শিথিল করার পর বাইরে মানুষের জটলা বাড়ছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার লকডাউন শিথিল করে চলতি মে মাসের ১০ তারিখ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে দোকান মার্কেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সিদ্ধান্তের পর করোনা সংক্রমণ ছড়ানো রোধে মে মাসের ৯ তারিখে যৌথসভা করে মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারপরও অনেক মার্কেটেই একদিকের সাটার খুলে কেনাবেচা শুরু হয় । শুধু কাপড় বা পোশাকের দোকান নয় লকডাউন শিথিল হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের দোকান, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়া হয়। এতে রাজশাহী মহানগরীর সাথে বিভিন্ন উপজেলার মানুষজনের যাতায়াত বাড়তে থাকে এই কারণে নগরীতে যানবাহন চলাচল জনসমাগম আগের তুলনায় কিছুটা বাড়তে শুরু কর। তাই ১৫ মে আবার সভা করে ঈদের আগ পর্যন্ত মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্ত এ সিদ্ধান্ত মেনে অনেক মার্কেট খুলে কেনাবেচা করতে দেখা যায়।
বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীতে কিছু দোকান ছাড়া প্রায় সব ধরনের দোকান খোলা রয়েছে। এ কারণেই মহানগরজুড়ে রিকশা-অটোরিকশাসহ প্রায় সব ধরনের যান চলাচল করছে। গণপরিবহন বাদে সব ধরনের যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এতে চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে রাজশাহী। লকডাউন এর সময় যানবাহন ও মানুষের দেখা না মিললেও এখন প্রায় সব স্থানেই মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার এলাকায় ভিড় বাড়ছে আগের মতোই। এখন এ এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানবাহনের ভিড় থাকে। গতকাল শনিবারও দেখা গেছে একই চিত্র। এ রাস্তায় রিক্সা-অটোসহ প্রাত সব ধরনের যানবাহনকে যানজটের কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
আর এ এলাকার মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায় প্রচুর । অনেক ক্রেতাকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। অন্য যেকোনো দিনের তুলনায় এদিন অনেক বেশি ভিড় ছিল। ক্রেতা-বিক্রেতা কাউকেই সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি। গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে যে যার মত পোশাক কেনাকাটা সহ অন্যান্য জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন। ১৫ মে রাজশাহী মহানগরীতে প্রথম কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর আগে জেলার ৭ টি উপজেলার করোনা পজেটিভ হয়। রাজশাহী মহানগরীতে কোন রোগী ছিল না। করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরেও মানুষ সচেতন না হয়ে নিজের পরিবারের ও ছেলেমেয়ে নিয়ে সাহেব বাজারে যাচ্ছেন ঈদের কেনাকাটা করতে।
এ অবস্থায় রাজশাহী মহানগরীর সচেতন মানুষ নগরবাসীকে করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। যাতে অন্তত মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করে। এসব সচেতন মানুষ বলছেন এখনই যদি অবাধ চলাচল বন্ধ, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানুষ না মানে তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। রাজশাহীকে করোনা মুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক গুরুত্ব মেনে চলার বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, জেলায় এ পর্যন্ত ১৯ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৬ জন সুস্থ, ১ জন মারা গেছে ও বাকি ১২ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। রাজশাহী মহানগরীতে প্রথম ১ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ৭টি উপজেলাতেই করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে সমস্যা নাই। স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দোকান খুললে অবশ্যই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর যারা কেনাকাটা করতে আসছেন তাদেরকেউ সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করতে হবে।
এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০