খবর২৪ঘণ্টা,আন্তর্জাতি ডেস্ক: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের বৈঠক নিয়ে আমেরিকার সাধারণ মানুষের মধ্যে নানান আলোচনা রয়েছে। তবে যখন বা যেখানেই বৈঠকটি হোক না কেন, সেই বৈঠকের ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার শক্তিশালী প্রতিবেশি চীনের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সম্পর্ক বেশ অস্বস্তিকর।
এমন প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য সম্পর্কের পার্থক্য কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বেইজিং সফরে গেছে। কিন্তু একইসাথে চীন তাদের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড বা এক অঞ্চল, এক পথ, এই নীতি নিয়ে এগুচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সী পেক নামের চায়না-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর তৈরির কাজ শুরু করার বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। এখন চীন-পাকিস্তান করিডোর তৈরির প্রশ্নে ইসলামাবাদও বেশ আগ্রহী।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ইসলামবাদকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়া বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধ করে দেবে।
ইসলামাবাদে শীর্ষ স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন বিবিসির সংবাদদাতা। শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করেন, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক করিডোর নিয়ে আপত্তির কারণেই ট্রাম্প পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধের হুমকি দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘চীন এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে সুপার পাওয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেইজিং ও ইসলামাবাদ আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এখন যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে চীনের সাথেই পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা উচিত।’
ইসলামাবাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থী বলছিলেন, ‘আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের মুল সমস্যা অর্থনৈতিক করিডোর নিয়ে। ট্রাম্প চান না পাকিস্তানে এ করিডোর তৈরি হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক পারভেজ আলীও অর্থনৈতিক করিডোরের পক্ষে কথা বলেন। তার ভাষায়, ‘পাকিস্তানের ভবিষ্যত হচ্ছে চায়না। সেটা এখানকার টেলিভিশন, রেডিও বা গণমাধ্যমের খবর দেখলেই বোঝা যায়, দুই দেশের বন্ধুত্ব এখন আরও গভীর হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমেও সেটাই তুলে ধরা হচ্ছে। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষও চীনকে কাছের বন্ধু হিসেবে দেখছে।’
এই শিক্ষক এটাও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে পাকিস্তান এখন চীনের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়েই গুরুত্ব দিচ্ছে। অনেক চীনা নাগরিক যে ইসলামাবাদ এবং লাহরে বসবাস করছে, সে কথাও তিনি তুলে ধরেন।
ইসলামাবাদের রাস্তায় হাঁটলেই অনেক চীনা নাগরিক চোখে পড়বে। এখানে অনেক চাইনিজ রেস্ট্ররেন্ট আছে। নতুন নতুন অনেক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। এখানকার পরিবেশটাই দুই দেশের গভীর সম্পর্কের কথা বলে দেবে।
অধ্যাপক পারভেজ আলী বলছিলেন, চীন পাকিস্তানে বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধের হুমকি দিয়েছেন, তখন সাধারণ মানুষও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কে আর আগ্রহী নয়। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে কোটি কোটি ডলার দিচ্ছে, এই মিথ্যা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে দশ বছর আগে পাকিস্তান পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু চীন পাকিস্তানকে এর কয়েকগুণ বেশি সাহায্য করছে। ফলে পাকিস্তান চীনের সাথেই এখন এগুতে চায়।’
চীন পাকিস্তানে পারমাণবিক চুল্লীও নির্মাণ করছে। দু'টির নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ পর্যায়ে এসেছে। আরও কয়েকটির কাজ চলছে। চীন থেকে ইতিমধ্যে পাকিস্তানের ভিতর দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হয়েছে গোয়াডর বন্দর পর্যন্ত। সেখান চীনের পন্য গেছে আফ্রিকায় এবং পশ্চিম এশিয়ায়। এখন অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি করার বিষয়টি চীনের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প।
ইসলামাবাদে নতুন এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টের একজন কর্মী বলছিলেন, দুই দেশের ভবিষ্যত সম্পর্ক আরও ভাল হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘এখন দুই দেশের সম্পর্ক এখন খুব ভাল। ভাবিষ্যতে আরও গভীর হচ্ছে আমাদের সম্পর্ক।’
কমিউনিস্ট দেশ চীন এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পাকিস্তানের এই সম্পর্ক নিয়ে বিশ্লেষকদেরও কৌতুহল কিন্তু বেড়েই চলেছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০