খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: বন্যা আর মহামারীর সঙ্কটের মধ্যে চালহসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।বিশেষ করে গত ২০ দিনে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দামই কেজিতে দুই-তিন টাকা করে বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দামও বাড়াতে হচ্ছে বলে মিল মালিকরা দাবি করছেন।
রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরে চালের পাইকারি বিক্রেতা মহিউদ্দিন হারুন শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, আগস্টের শুরু থেকেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
“দেখা গেছে এই কয়দিনে বস্তায় (৫০ কেজি) অন্তত দেড়শ টাকা বেড়েছে। প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। গত বছরের এই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে চালের দাম বস্তায় অন্তত ৩০০ টাকা করে বেড়েছে।”
বর্তমানে মিনিকেট প্রতি বস্তা ২৫০০ টাকা থেকে ২৬০০, নাজির ২৫৫০ টাকা থেকে ২৬০০, পাইজাম ও কাটারি ২৩০০, বিআর আটাশ ২১৫০ টাকা থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান হারুন।
চালের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “কেন যে বাড়ছে তাতো বুঝে আসছেনা। এবার তো ধানের ফলন ভালোই হয়েছিল। সরকার আমদানির সুযোগ দিয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু বাজারে এখন পর্যন্ত কোনো আমদানি করা চাল আসেনি।”
চালের দাম বাড়ার পাশাপাশি পাইকারি বাজারে বেচাকেনাও কমে গেছে বলে মনে করেন হারুন। তার এমন ভাবনার মিল পাওয়া গেল মিরপুরের উত্তর পীরেরবাগে মুদি দোকানি আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়ার কথায়।
রাজ্জাক বলেন, “চালের দাম সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়ছে। বাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। তাই আমরা কম করে কিনছি।”
বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে মিল রেখে স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৮ টাকা, বিআর আটাশ ৫২ টাকা এবং মিনিকেট ৬১ টাকায় করে বিক্রি করছেন তিনি।
তবে সঙ্কটকালীন এই সময়ে সুগন্ধি চালের দাম বেশ খানিকটা কমে এসেছে।
মিরপুরের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন হারুনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুগন্ধি চালের বস্তা (৫০ কেজি) ৩৩০০ টাকা থেকে ৩৮০০ টাকার মধ্যে।
মহামারীর কারণে গত কয়েক মাস লকডাউন পরিস্থিতিতে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ এবং বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘটা বন্ধ থাকায় সুগন্ধি চালের দাম পড়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।
মিরপুরের বড়বাগ এলাকার মুদি দোকানগুলোতে ৬৮ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় প্রতিকেজি সুগন্ধি চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে।
চালের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে নওগাঁ জেলা চালকল সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, গত জুলাইয়ের শেষের দিকে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছিল।
“মাঝখানে সরকার চাল আমদানির পথ সুগম করলে এর প্রভাবে দাম কিছুদিনের জন্য স্থির ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ চাল আমদানি করেছে বলে খবর পওয়া যায়নি। সে কারণ গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও চাল ও ধানের দাম বাড়তে শুরু করেছে।”
বর্তমানে বাজারে ধান প্রতি মণ ১১০০ থেকে ১১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান রফিকুল।
টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, শনিবার নাজিরশাইল ও মিনিকেটের মতো সরু চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা থেকে ৬৪ টাকায়, এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকা থেকে ৬২ টাকায়। আর গতবছর একই সময়ে ৪৭ টাকা থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এসব চাল, অর্থাৎ এবছর চালের দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
একইভাবে মাঝারি মানের চাল (পাইজাম ও লতা) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫৪ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ৪৪ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এসব চাল গতবছরের একই সময়ের তুলনায় আট শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
মোটা চাল হিসাবে পরিচিতি স্বর্ণা ও গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গতবছর এই সময়ে এই চাল বিক্রি হয়েছিল ৩৪ থেকে ৩৮ টাকায়। সেই হিসাবে গতবছরের একই সময়ের তুলনায় দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
চালের পাশাপাশি সবজির দামও গত তিন সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে গত দুই দিন ধরে সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
বড়বাগে সবজি বিক্রেতা বেলাল উদ্দিন বলেন, কাঁচা মারিচের সরবরাহ খুব কম, দামও বেড়ে গেছে। এখন প্রতি কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ভালো মানের মরিচ কেউ কেউ ২০০ টাকায়ও বিক্রি করছেন।
এছাড়া বেগুন ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পীরেরবাগে সবজি বিক্রেতা শাহনেওয়াজ বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমে গেছে।
বাজারে ডিমের দামও ডজনে পাঁচ টাকা বেড়ে ১১৫ টাকা হয়েছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১১৫, লেয়ার ও কক মুরগী ২৩০ এবং দেশি মুরগি ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
খবর২৪ঘন্টা/নই
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০