পাবনা প্রতিনিধিঃ এবার পাবনার চাটমোহরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেন সেবাগ্রহীতা ভুক্তভোগী মানুষ। সেইসাথে উপস্থিত সেইসব দপ্তরের কর্মকর্তারা তাৎক্ষনিক সেবা বঞ্ছিত মানুষের সমস্যা সমাধানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ করে দেয়ার অঙ্গীকার করেন। আর এই গণশুনানী অনুষ্ঠান ব্যাপক সাড়া ফেলে সাধারণ মানুষদের মাঝে।
সারাদেশে ধারাবাহিক আয়োজনের অংশ হিসেবে সোমবার বেলা ১১টায় চাটমোহর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গণশুনানী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত কার্যালয় পাবনা। এতে সহযোগিতা করে চাটমোহর উপজেলা প্রশাসন ও চাটমোহর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি। প্রধান অতিথি হিসেবে গণশুনানী উদ্বোধন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম।
গণশুনানীতে উপস্থিত চাটমোহর উপজেলার দোলং গ্রামের রিপন হোসেন অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ২০১৫-১৬ সেশনে চাটমোহর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সময় ফরম ফিলাপ বাবদ অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বিধি বহির্ভুতভাবে ৬ হাজার ৮০০ টাকা নেন। তার প্রতিবাদ করায় তাকে ৫৭ ধারা ও আইসিটি মামলায় জেলে যেতে হয়। পরবর্তীতে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেবার পর তদন্তে তার দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেইসাথে তিনি অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা কলেজ ফান্ড থেকে হাতিয়ে নিয়ে অনেক বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান তিনি। এ সময় অবশ্য কলেজ অধ্যক্ষ গণশুনানীতে উপস্থিত ছিলেন না। পরে দুদক কমিশনার অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগটি গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানান। বলেন, তদন্তে প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর এই ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুর রহমান তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি উল্লেখ করে তাকে তিরস্কার করা হয়।
ফৈলজানা ইউনিয়নের উপ-সহকারি কর্মকর্তা (ভুমি) শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমির খাজনা খারিজ করে দেয়ার নাম করে মোটা অংকের ঘুষ নেয়ার অভিযোগ করেন মন্টু রিবেরু ও বেনেটিক রিুবেরু নামের দুই ভুক্তভোগী। সেখানে উপস্থিত শরিফুল সদুত্তর দিতে না পারায় ঘুষের টাকা ফেরত দেয়া ও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার।
অপরদিকে আসলাম শিকদার নামের এক ভুক্তভোগী চাটমোহর রেলস্টেশন মাস্টার মাসুম আলী খানের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারীর অভিযোগ তুলে বলেন, কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু স্টেশন মাস্টারের কাছে সবসময় টিকিট পাওয়া যায়, কিনতে হয় বেশি দামে। স্টেশন মাস্টার স্বীকার করে বলেন, তার কাছে সবসময় কিছু ভিআইপি ফোন করে এসি ও শোভন চেয়ারের টিকিট দাবি করেন। তাই তিনি বাধ্য হয়ে কিছু টিকিট কিনে তিনি নিজের কাছে রাখেন। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় চাটমোহর স্টেশন মাস্টার মাসুম আলী খানকে শোকজ করার নির্দেশ দেয়া হয় পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে। এছাড়া পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেবার অনেকগুলো অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মানুষ। সেগুলো বিধি মোতাবেক সমাধানের আশ্বাস দেন সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মাশফিকুল হাসান।
এছাড়াও গণশুনানীতে চাটমোহর উপজেলা ভূমি অফিস, সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, হিসাব রক্ষণ অফিস, রেলওয়ে অফিস, সমাজসেবা অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য সরকারি অফিস-এর সেবা বঞ্ছিত, হয়রানীর শিকার মানুষ সরাসরি উপস্থিত থেকে এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে লিখিত অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা সেইসব অভিযোগের তাৎক্ষনিক জবাব দেন এবং কয়দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান দিবেন তারও প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে গণশুনানী উদ্বোধন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, দূর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন কারো রক্তচক্ষুকে ভয় করে না। কোথাও দুর্নীতি হলে কিংবা কেউ দুর্নীতি করলে আমাদের জানান আমরা অ্যাকশানে যাবো। দুর্নীতিবাজনদের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। আর ১০৬ নম্বর হটলাইনে অভিযোগ জানাতে পারেন যে কেউ, কোনো টাকা খরচ হবে না। দুদক কমিশনার বলেন, দেশ অনেক আগেই উন্নয়নশীল দেশ হতে পারতো। কিন্তু দুর্নীতির কারণে হয়নি। দেশে সৎ মানুষ গড়তে, সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সারাদেশে ২৬ হাজার সততা সংঘ গঠন করা হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে সততা স্টোর। আগামী ১০/১৫ বছর পর এই দেশের হাল ধরবে এখনকার শিক্ষার্থীরা। তাই তাদের মাঝে সততার বীজ বুনতে হবে। যার ফল স্বরুপ আগামীতে দেশে সৎ কর্মকর্তা তৈরী হবে, দূর্নীতি কমে যাবে অনেক। সরকারি সব দপ্তরে সৎ মানুষ থাকলে সেবাপ্রত্যাশীরাও এর সুফল পাবে। দুদক সৎ মানুষ সৃষ্টিতে কাজ করছে। এজন্য পরিবার ও শিক্ষকদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। এজন্য নিজে সৎ হয়ে অন্যকে সৎ হতে উৎসাহিত করতে হবে সবাইকে।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস, দুদক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (প্রতিরোধ ও গণসচেতনতা) মো: মনিরুজ্জামান, দুদক রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল আজিজ ভূঁইয়া, দুদক পাবনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক, চাটমোহর উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা। দুদকের গণশুনানী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রুহুল আমিন। এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি চাটমোহরের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০