চাঁপাই ব্যুরো: প্রায় আধা কিলোমিটার হেঁটে চিকিৎসা নিতে আতাহার কমিউনিটি ক্লিনিকে এসেছিলেন সারাবান তহুরা। কিন্তু ক্লিনিকে আসার পর তালাবন্ধ দেখে আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মাথার উপর। কি সমস্যার জন্য ক্লিনিকে এসেছিলেন- এ প্রশ্নের উত্তর না দিলেও তিনি জানালেন চিকিৎসা করাতে না পারলে তার সমস্যা আরো জটিল হবে। মঙ্গলবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আতাহার কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে কথা হয় চল্লিশোর্ধ সারাবান তহুরার সঙ্গে। তিনি জানান, এই ক্লিনিকে নিয়মিত আসেন তিনি। কিন্তু জানতেন না এখন ক্লিনিক বন্ধ। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের চাঁন্দলাই গ্রাম থেকে পাঁয়ে হেঁটেই এসেছেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসা না পেয়ে আবারো ফিরে যেতে হচ্ছে। ক্লিনিকের মূল ফটকেই তালা দেয়া ছিল মঙ্গলবার। স্থানীয়রা জানান শনিবার থেকেই বন্ধ আছে ক্লিনিক।
গতকাল বেলা ১২টার দিকে নাচোল উপজেলার লক্ষ্মীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় দরজা খোলা থাকলেও নেই কোনো রোগির উপস্থিতি। একজন সহকারী ক্লিনিকের বাইরে বসে আছেন।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার-সিএইচসিপিদের আন্দোলনের কারণে কার্যতঃ বন্ধ হয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৪৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, জেলার হাতে গোনা কয়েকটি বাদে সব ক্লিনিকই বন্ধ রয়েছে। কয়েকটি ক্লিনিক সিএইচসিপি’র সহকারীরা খুলছেন। তবে তাদের চিকিৎসা দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন সিএইচসিপিরা। মানববন্ধন, বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি ও সাময়িক কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। তবে গত শনিবার থেকে শুরু করেছেন লাগারতার ধর্মঘট। এতে ভেঙ্গে পড়েছে গ্রামের চিকিৎসা সেবা।
লক্ষ্মীপুর গ্রামের আসনারা খাতুন বলেন, হারা গরিব মানুষ। হাতের কাছে এই ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতুন, ওষুধ পাইতুন। কিন্তু এখন সব বন্ধ। ডাক্তার দেখাতে না পারলে হারা কোথায় যাব? তিনি জানান, জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে গিয়ে চিকিৎসক দেখাতে হলে যাতায়াত খরচই হবে ৮০ টাকার বেশি। এই অতিরিক্ত টাকা খরচ করার মতো ক্ষমতা নেই তাদের। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন হওয়ার পর লক্ষ্মীপুর গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার সেখানেই চিকিৎসা নিতেন। কিন্তু এখন সেটাও বন্ধ। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই একই গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান, সিএইচসিপিদের আন্দোলনের বিষয়টির একটা সুরাহা হওয়া উচিত। কারণ তাদের কারণেই গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সেবা পৌঁছেছে। তবে তিনি সিএইচসিপিদের সমালোচনা করেও বলেন, এভাবে ক্লিনিক বন্ধ রেখে আন্দোলন করা মানে আমাদের ক্ষতি করা। আমাদের ক্ষতি করলে আল্লাহ তাদেরও ক্ষতি করবে। চাকরি সরকারি হবে না।
সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জানান, সারাদেশের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ধর্মঘট পালন করছেন তারা। জেলা কর্মরত সব সিএইচসিপি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বুধবার প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকবেন তারা। তিনি জানান, চাকরি জাতীয়করণের আশ্বাস তারা বারবারই পেয়েছেন কিন্তু সেটা কার্যকর হয়নি। এবার চাকরি জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। চাকরি জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে তারা ফিরবেন না বলেও জানান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন সাইফুল ফেরদৌস মোঃ কামাল আতার্তুক জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা ক্লিনিকের চাবি নিয়ে গেছেন।কেউ কেউ ক্লিনিকের চাবি দিয়ে গেলেও ওষুদের আলমারির চাবি নিয়ে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। জেলার মাত্র কয়েকটি ক্লিনিকের চাবি দিয়ে গেছেন সহকারীদের কাছে। সেই সহকারীরা ক্লিনিক খুলছেন। কিন্তু তাদের ওষুধের আলমারির চাবি দিয়ে না যাওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবা একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। তিনি জানান, এভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত হওয়ায় গ্রামের গবীর মানুষগুলোর জন্য তার মায়া হচ্ছে। কিন্তু তার কিছু করার নেই। ক্লিনিকের বা ক্লিনিকের ওষুধের আলমারির চাবি সিএইচসিপিদের কাছে রেখে দেয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় জেলার সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্যাপকহারে রোগি বেড়ে গেছে। এ রোগি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০