খবর২৪ঘন্টা স্পোর্টস ডেস্ক: ২০০৪ সালের সেই বিখ্যাত ভারত-পাকিস্তান সিরিজের কথা এখনও মনে রেখেছে ক্রিকেট প্রেমীরা। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার নিয়মিত সিরিজ বিনিময় তখনও ছিল। তবে কার্গিল যুদ্ধের পর সেবার প্রথম পাকিস্তানে খেলতে গিয়েছিল ভারত। সেই সিরিজটা ‘বিখ্যাত’ হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিলেন পাকিস্তানের কোচ জাভেদ মিয়াঁদাদ। সিরিজ শুরুর আগে তিনি হুট করেই ভারতীয় বোলার ইরফান পাঠানের উদ্দেশ্যে বলে বসেন, ‘এমন বোলার তো পাকিস্তানের অলি-গলিতেও পাওয়া যায়।’
আঁতে ঘা লাগে ভারতীয়দের। তেতে ওঠেন ইরফান পাঠান। শুধু তাই নয়, ওই সিরিজেই নিজেকে একজন বিশ্বসেরা জাত বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন ইরফান। সেবার সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল পাকিস্তান থেকে ২-১ ব্যবধানে টেস্ট এবং ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয় করে দেশে ফিরে আসে।
কিন্তু যে কথা বলে সিরিজের আগে আগুন জালিয়ে দিয়েছিলেন মিয়াঁদাদ, সেটা আজও মনে রেখেছেন ভারতের ক্রিকেট ভক্তরা। ইরফান বাবা মেহমুদ খান পাঠান কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি তার ছেলের নামে বলা মিয়াঁদাদের ওই কথাটি। এ কারণে, পাকিস্তান গিয়ে তিনি মিয়াঁদাদকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য খুঁজেছিলেন।
সে ঘটনার কথা নিজেই জানালেন ইরফান পাঠান। টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমে গিয়ে মিয়াঁদাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন মেহমুদ খান পাঠান। টেস্ট সিরিজে ইরফানের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনেই কুপোকাত হয়ে পড়ে পাকিস্তান।
স্টার স্পোর্টসের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান শো ক্রিকেট কানেক্টেড-এ ইরফান পাঠান বলেন, ‘আমার মনে আছে, জাভেদ মিয়াঁদাদ বলেছিলেন, ইরফান পাঠানের মত বোলার নাকি পাকিস্তানের যে কোনো অলি-গলিতে পাওয়া যায়। নিউজটা পড়ার পর, আমার বাবার কথাটা মোটেই পছন্দ হয়নি। মনে আছে, সম্ভবত টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচের পর আমার বাবা পাকিস্তান গিয়েছিলেন। আমার কাছে এসে বললেন, আমি চাই পাকিস্তানের ড্রেসিং রুমে যেতে। সেখানে গিয়ে আমি জাভেদ মিয়াঁদাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। তখন ওনাকে আমি বলেছিলাম, আমি চাই না আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে।’
এরপর মিয়াঁদাদের সঙ্গে ঠিকই দেখা হয়েছিল ইরফানের বাবার। সে ঘটনা ইরফান পাঠান বর্ণনা করেন এভাবে, ‘কিছুক্ষণ পরই মিয়াঁদাদ আমার বাবাকে দেখতে পান এবং দাঁড়িয়ে যান। কাছে এসে বলেন, না, আমি আপনার ছেলে সম্পর্কে কিছুই বলিনি। আমার বাবার চেহারায় তখন হাসির রেখা ফুটে ওঠে এবং বলে ওঠেন, আমি কিন্তু এখানে আপনাকে কিছু বলার জন্য আসিনি। আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি শুধুমাত্র, আপনি একজন দুর্দান্ত ক্রিকেটার ছিলেন বলে।’
সেবার পাকিস্তান সফরের অভিজ্ঞতার কথা (পাকিস্তানে প্রথম সফর ছিল ইরফানের) জানাতে গিয়ে ইরফান প্রতিবেশিদের আতিথেয়তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘সেখানকার খাবার, ক্রিকেট, ড্রেসিংরুমের গল্প- সেগুলোর ভোলার মত নয়। সিরিজ জেতার পর শচিন পাজি (শচিন টেন্ডুলকার) আমাকে বলে কি না, একটি গান গাইতে। তবে ছোট একটা বিষয় ছিল, আমরা পুরো দল খেলেছিলাম একটি শরীর, একটি আত্মা হয়ে। এটা ছিল সত্যিই দুর্দান্ত একটি বিষয়।’
সাবেক ভারতীয় পেসার আশিস নেহরাও সেই সিরিজের স্মৃতিচারণ করেন। ওই সময় তিনি স্মরণ করেন, ২০০৩-০৪ সালের ওই সিরিজে বেশ কিছু দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল ভারতীয়রা। বিশেষ করে লক্ষ্মিপতি বালাজির কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ওই ৬ সপ্তাহ দুর্দান্ত কেটেছিল আমাদের। বাম হাতে সে (বালাজি) ছক্কা হাঁকিয়েছিল তখন। বিরেন্দর শেবাগের ট্রিপল সেঞ্চুরি, রাহুল দ্রাবিড়ের ডাবল, ইরফান পাঠানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল সত্যিই অসধারণ।’
জাভেদ মিয়াঁদাদ ভারতীয় দলকে তার বাসায় দাওয়াত করেছিলেন। নেহরা বলেন, ‘আমি এখনও মনে করতে পারি, জাভেদ মিয়াঁদাদ আমাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন তার বাসায়। সেদিন তিনি যা খাইয়েছিলেন, তা ছিল সত্যিই অসাধারণ। সারাজীবন ভুলতে পারবো না।’
খবর২৪ঘন্টা/নই