নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহী মহানগরীতে ইয়াবাসহ মাগফুরুর রহমান ডাবলু নামের এক যুবক কে আটক করে যে মাদকদ্রব্য মামলা দেওয়া হয়েছে তার এজাহারে গড়মিল দেখা গেছে। নগর গোয়েন্দা শাখা ডিবির এএসআই তসলিম বাদী হয়ে রাজপাড়া থানায় মাদকদ্রব্য আইনে যে মামলা দায়ের করেছেন তার এজাহারে বলা হয়েছে, ডিবির এএসআই তসলিম উদ্দিন সঙ্গীয় কন্সটেবল হানিফ উদ্দিন, গোলাম রাব্বানী ও শাহজামাল ১৮ এপ্রিল আনুমানিক রাত ৯ টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজপাড়া থানাধীন তেরখাদিয়া ৩নং ওয়ার্ড আ’লীগ অফিসের ২০ গজ উত্তর পাশে সিটি হাটগামী পশ্চিম সাইডে একজন লোক নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অবস্থান করছে বলে খবর পায়। খবর পেয়ে তারা রাত ১০টা ৫ মিনিটের দিকে সেখানে উপস্থিত হলে ডিবি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে একজন লোক দৌড় দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়। যার সাক্ষী স্থানীয় কয়েক জনকে করা হয়েছে।
এজাহারে আরো বলা হয়, আটকের পর তার দেহ তল্লাশীকালে টাওজারের পকেটে থাকা সাদা রংয়ের পলিথিন কাগজের পুটলির মধ্যে থেকে ২০ ইয়াবা ট্যাবলেট ডাবলু নিজেই বের করে দিয়েছে। এ ছাড়াও এজাহারে উল্লেখিত আটকের সময়সহ বেশ কয়েকটি তথ্যে গড়মিল দেখা গেছে খবর ২৪ ঘণ্টার অনুসন্ধানে।
মামলার এজাহারে ডাবলু নিজেই নিজের পকেট থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট বের করে দিয়েছে বলা হলেও ডাবলুর বাবা আব্দুর রহমান মজু পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, তার ছেলে ডাবলুকে ১৮ তারিখ রাত আনুমানিক পৌনে ৮টার দিকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই তসলিম উদ্দিনের নের্তৃত্বে ৩/৪ জনসহ কথিত সোর্স সাদা পোশাকে আটক করে। আটকের সংবাদ পেয়ে তিনি দ্রত ঘটনাস্থলে গিয়ে এএসআই তসলিমের কাছে আটকের কারণ জানতে চাইলে তাকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এ সময় এলাকাবাসী সেখানে জড়ো হয়ে যায়। এলাকাবাসীর চাপের মুখেও আটকের সঠিক কারণ তিনি তখন জানাতে পারেন নি।
ওই সময় তার সঙ্গে থাকা কথিত সোর্সসহ প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তার শরীর তল্লাশীসহ মসজিদের আশেপাশে তল্লাশী করে। সেখানে কিছু না পাওয়া যাওয়ায় পশ্চিমে ৩নং ওয়ার্ড আ’লীগ কার্যালয় সংলগ্ন তার ছেলেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার কিছুক্ষণ পর পরই হেলমেট পরা কর্থিত সোর্স পার্টি অফিসের পেছনে ড্রেনের উপর খোঁজাখুজি শুরু করে। সেখানে ড্রেনে ইয়াবা ফেলে রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়। রাত আনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হলে উপস্থিত এলাকাবাসী নিরাপদ স্থানে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই নাটকীয়ভাবে পুলিশের একজন সোর্স ও একজন পুলিশ সদস্য হেলমেট পরা অবস্থায় চিৎকার করে বলেন, স্যার ৭পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে ডাবলুকে ডিবি অফিসে নিয়ে চলে যায়। উপস্থিত জনগন মোবাইলে ভিডিও ও ছবি ধারণ করেন।
পরদিন ১৯ তারিখ সকাল ৮টার দিকে ডাবলুর বাবা রাজপাড়া থানায় ছেলের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে ডাবলু তার বাবাকে জানায়, ডিবি অফিসের এএসআই তসলিম তাকে বলেছে তোর কাছে ২০ পিস ইয়াবা ছিল সেটা তুই স্বীকার করবি। নইলে তোকে-জামায়াত শিবিরের নাশকতা মামলা দিয়ে ক্রস ফায়ার দেওয়া হবে। ছেলের মুখে এমন কথা শুনে ডাবলুর বাবা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাসায় গিয়ে বিষয়টি সবাইকে জানায়। সে সময় ২০ পিস ইয়াবা তার পকেটে পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলায় যাদের সাক্ষী বানানো হয়েছে তারা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। সাক্ষীসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেককে জিজ্ঞেস করলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।
তবে মামলার সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে খবর ২৪ ঘণ্টার পক্ষ থেকে কথা হলে, তারা জানান, ডাবলুকে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সে সময় বৃষ্টি শুরু হলে সবাই চলে যায়। তখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে পুলিশ ইয়াবা পায়নি। তারা ড্রেন খুঁজে ইয়বা পেয়েছে বলে পরে শুনেছেন। এটা গোটা এলাকাবাসী দেখেছে। তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আইন অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, ডাবলুর বাবা বুধবার খবর ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, ডিবি কর্মকর্তারা দাবি করেন, ডাবলু ইয়াবা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাকে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে যে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল তা আমি নিশ্চিত। যেহেতু আমিও পুলিশে দীর্ঘদিন চাকুরী করেছি তাই আমিও পুলিশের ভাষা বুঝি। না বোঝার কিছু নেই। তিনি আরো বলেন, এটা পূর্ব পরিকল্পিত তা আমি নিশ্চিত। কি কারণে তার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি খবর ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, আমার চাকুরী জীবনের অর্থ ও আমার মেঝ ছেলে বিদেশে রয়েছে। ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে মোটা অঙ্কের টাকা পেতে পারে এমন আশায় এই ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমি মামলার এজাহার পড়ে হতভম্ব হয়ে গেছি। কারণ এজাহারে আটকের সময় ও আমার ছেলের পকেট থেকে ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা কাল্পনিক তথ্য। কারণ স্থানীয় লোকজন ও আমার পরিবারের সবাই সেখানে অবস্থান করছিল। সবাই দেখেছে যে ড্রেনে তারা মাদক খোঁজাখুজি করছিল। তাই তিনি বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তার ছেলেকে ন্যায় বিচান দেওয়ার আহবান ও দোষীর শাস্তি দাবি করেন। এছাড়া তার ছেলের কাছ থেকে ৩টা মোবাইল নিয়ে নিলেও সিজার লিস্টে তা উল্লেখ করা হয়নি। ২টি ফেরত দেওয়া হয়েছে আর একটি এখানো ফেরত দেওয়া হয়নি।
খবর ২৪ঘণ্টা/এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০