নওগাঁর মহাদেবপুরে কীটনাশক প্রয়োগের মাত্র তিন দিনের মধ্যেই পুড়ে গেছে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার পেঁয়াজ বীজ। পুড়ে গেছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। স্বপ্ন ভেঙ্গে এখন মাথায় হাত এই পেঁয়াজ বীজ চাষীর। কীটনাশকের ডিলার বলছেন ভালো কোম্পানীর ভালো ওষুধ দিয়েছেন। আর কৃষি বিভাগ বলছে ওই কীটনাশক পেঁয়াজের জন্য নয়।
সহায় সম্বলহীন, ভূমিহীন দিনমজুর চাষী দুলাল হোসেন উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের সফাপুর মাদ্রাসাপাড়া গ্রামের মিরাজ উদ্দিনের ছেলে। স্ত্রী-সন্তানসহ ৫ জনের সংসার। অন্যের জমিতে কাজ করে দিন আনে দিন খায়। নিজের জমি নেই। তাই ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল আলম বাচ্চুর ১৭ কাঠা জমিতে লাগিয়েছেন পেঁয়াজ বীজ। গতবছর ৫ কেজি পেঁয়াজ লাগিয়ে সফলতা পেয়েছিলেন। তাই এবার স্ত্রীর মাধ্যমে দুটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এই জমিতে ১০ মণ পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার পুরোটাই। তার উপর নিজেদের শ্রম তো রয়েছেই।
গত কার্তিক মাসে লাগিয়ে পাঁচ মাস ধরে তিল তিল করে শ্রমে ঘামে সময় দিয়েছেন এই জমিতে। সোনালী স্বপ্ন বুনেছেন ঘাম ঝরানো চিক চিক করা চোখে। আর মাত্র দুসপ্তাহ পরেই ঘরে উঠতো পেঁয়াজের বীজ। বাজারে পেঁয়াজের বীজের দাম অনেক। গতবছর বিক্রি হয়েছে তিন হাজার দুশ’ টাকা কেজি দরে। এবার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার আটশ’ টাকায়। ১৭ কাঠা জমি থেকে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার পেঁয়াজ বীজ উঠতো।
রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে গ্রামীণ সড়কের পাশেই এই পুড়ে যাওয়া পেঁয়াজ বীজের ক্ষেত দেখে খোঁজ নিতে গেলে কৃষক দুলাল দোকানের কয়েকটি রশিদ দেখিয়ে জানালেন, প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের সার আর কীটনাশক কিনতেন সফাপুর ইউনিয়ন সদরের পাহাড়পুর বাজারের কীটনাশকের ডিলার নাহিদের দোকান থেকে। তারই পরামর্শে এই ক্ষেতে যাতে কোন পোকা না লাগে, আর পঁচামিনা রোগে যেন আক্রান্ত না হয় সেজন্য গত ১৬ মার্চ তার দোকান থেকে পেঁয়াজের বীজের ক্ষেতে
প্রয়োগের জন্য কিনে আনেন বায়ার কোম্পানীর নাটিভো-১০ গ্রাম ১২০ টাকায় ও সলোমন-১০০ মিলিগ্রাম ২৪০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে সেগুলো ডিলারের পরামর্শ মত পানির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করেছেন পেঁয়াজের বীজের জমিতে। কিন্তু তিন দিন পরেই সব শেষ। সাদা সাদা বীজগুলো পুড়ে কালো বর্ণ ধারণ করেছে। দুএকটি গাছে সাদা সাদা বীজ এখনও থাকলেও পুড়ে ছাঁই হয়েছে কৃষক দুলাল-আসমা দম্পতির সব স্বপ্ন।
কৃষক দুলালের কিষাণী স্ত্রী আসমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানালেন, ক্ষেতের ফসল হারিয়ে তার স্বামী একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন। দুই সমিতির কিস্তির টাকা কোথা থেকে দিবেন তা নিয়েও দিশেহারা। নিরুপায় হয়ে প্রায়ই দুলাল আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছেন।
জমির পাশেই চোখে পড়লো গ্রামের একটি ঢোকের দোকান। দোকানী মহির উদ্দিনের ছেলে দবির উদ্দিন জানালেন, এই বিষ ছাড়া পেঁয়াজের বীজ পুড়ে যাবার আর কোনই কারণ নাই। অন্য গ্রামবাসীরও একই মত। তারা দরিদ্র কৃষক দুলালের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
পাহাড়পুর বাজারে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গেটের সামনেই দেখা গেল ওই ডিলার রায়হান কবির নাহিদের কীটনাশকের দোকান ‘মাস্টার কৃষি ক্লিনিক’। তার পিতা আব্দুল জলিল মাস্টারের নামে এই দোকান। কিন্তু সেটি বন্ধ। সাইন বোর্ডে লেখা মোবাইলফোনে কল দিলে নাহিদ ওই কৃষক দুলালকে ওই কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কেন পুড়ে গেলো সেটার জন্য কোম্পানীকে বলেন।’ পরামর্শ দেয়ার জন্য তিনি কোন ট্রেনিং নিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় জানান, নাহিদ একজন লাইসেন্সধারী কীটনাশক বিক্রেতা। কিন্তু ওই দুটি কীটনাশক পেঁয়াজ বীজের জন্য প্রযোজ্য নয়। সেগুলো শুধুমাত্র ধানের খেতে প্রয়োগ করা হয়। তাছাড়া পেঁয়াজ বীজ এখন ওঠার সময়। এসময় কোন কীটনাশকের প্রয়োজনই পড়ে না। ওই বিক্রেতা বিক্রি বাড়াতে না জেনেই ওই কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা জানান, একজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে ওই এলাকায় পাঠাচ্ছেন। ভূল পরামর্শ দিয়ে কৃষকের ক্ষতি হওয়ায় ওই কীটনাশক বিক্রেতার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।#
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০