খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া মানুষের অধিকারের লঙ্ঘন। উপরন্তু, এই কভিড-১৯ মহামারীর সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে এর প্রতিক্রিয়া হতে পারে প্রাণঘাতী। অতএব, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, ভারত ও মিয়ানমার সহ যেসব দেশে সম্পূর্ণ বা আংশিক ইন্টারনেট বন্ধ, সেসব দেশের উচিত অবিলম্বে ইন্টারনেট সম্পুর্ণ খুলে দেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস এক বিবৃতিতে এসব বলেছে।
এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য সংকটের সময় সময়োচিত সঠিক তথ্য প্রাপ্তি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়াদি,
চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খবর জানতে পারে।
এইচআরডব্লিউ’র ডিজিটাল অধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেবোরাহ ব্রাউন বলেন,
‘ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে মানুষ প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এই
বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটের সময় ইন্টারনেট শাটডাউন সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্য ও
জীবনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এছাড়া এই মহামারী নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হয়।’
এতে বলা হয়, যেসব মানুষ এখন বাসায় থাকছেন, তারা ডাক্তার, পরিবার,
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এছাড়া স্কুল
বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের পড়াশুনার জন্যও ইন্টারনেট জরুরি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের দেশে দেশে ইন্টারনেট শাটডাউন দেখা গেছে।
বিশেষ করে, উত্তেজনাকর সময়ে, যেমন নির্বাচন, সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ বা
সশস্ত্র সংঘাতের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা বেশি। ২০১৯ সালে
৩৩টি দেশ ২১৩ বার ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। ফেক নিউজ, জননিরাপত্তা ও জাতীয়
নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ইন্টারনেট ও ফোন যোগাযোগ
বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে কভিড-১৯-এর হুমকি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মানবিক
কাজে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রায় ৯ লাখ শরণার্থী ও স্থানীয় মানুষের
স্বাস্থ্য ও জীবন এতে হুমকির মুখে পড়েছে।
২০১২ সালের পর কেবল ভারতই ৩৮৫ বারের মতো ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। দেশটির
জম্মু ও কাশ্মীরে গত বছরের আগস্টে ভারত সরকার সম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা
বন্ধ করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট এই ইন্টারনেট বন্ধকে অবৈধ ঘোষণার পর ইন্টারনেট
সেবা ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে ফের। কিন্তু এরপরও অত্যন্ত নিম্নগতির ইন্টারনেট
দেওয়া হচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর, মানুষ অনেক জরুরি ওয়েবসাইটে
ঢুকতে পারছে না। নিম্নগতির কারণে টেক্সট মেসেজ ছাড়া আর কোনো কিছুই করা
যাচ্ছে না।
ইথিওপিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় অরোমিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য
পাচ্ছেন না। কয়েক মাস ধরে সরকার সেখানে ইন্টারনেট ও ফোন সেবা বন্ধ করে
রেখেছে। মানুষজন যোগাযোগ করতে পারছে না একে অপরের সঙ্গে। জীবনরক্ষাকারী
সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট থেকে
বিচ্ছিন্ন। প্রথমে রাখাইনের ৮ শহরে ও চিনের একটি শহরে জুনে এই নিষেধাজ্ঞা
আরোপ করা হয়। এতে করে সংঘাত উপদ্রুত ওই এলাকায় বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
হচ্ছেন। মানবিক সাহায্য প্রদান প্রক্রিয়ায়ও ব্যাহত হচ্ছে। রাখাইন ও চিনের ৫
শহরে ইন্টারনেট পুনরায় চালু করলেও, ফেব্রুয়ারিতে ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা
হয়।
আজ থেকে ৪ বছর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ প্রথম বারের মতো অনলাইনে
তথ্য প্রবাহের ওপর বাধা আরোপ করার নিন্দা জানায়। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কভিড-১৯ মহামারী চলাকালে ইন্টারনেট বন্ধ করার কোনো
যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। ২৭ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার
সকল সরকারকে সব ধরণের ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা
প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রাউন বলেন, বৈশ্বিক এই মহামারী চলাকালে, মানুষজন একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিনযাপন করছেন। এই সময় তথ্য পাওয়ার ওপরই জীবন-মৃত্যু অনেকাংশে নির্ভর করছে। তাই ইন্টারনেট বন্ধ করার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করতে হবে। সরকারগুলোর উচিত সকলে যেন সবচেয়ে দ্রুতগতির উপলভ্য ইন্টারনেট সেবা পায় তা নিশ্চিত করা।
খবর২৪ঘন্টা/নই
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০