নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে কেটেছে রাজশাহীবাসীর বছর। করোনা পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েন অনেক মানুষ। আর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি শিক্ষানগরী রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্য। করোনা ভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মধ্যে অনেকেই পুনরায় কর্ম পায়নি। লকডাউনে থাকার সময়গুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে হত দরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণ করা হলেও বছরজুড়ে মধ্যবিত্তরা আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে ছিলেন। সব মিলিয়েই ২০২০ সালে সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীবাসীর মধ্যে আতঙ্ক আর উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা ছিল।
করোনায় রাজশাহী মহানগর ও জেলায় মারা গেছে ৫৪ জন। আর শনাক্ত হয়েছে ৫৮০৮ জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছে ৫ হাজার ৪৯৫ জন। মার্চ থেকে বছরের পুরো ৯ মাস করোনার প্রভাব ছিল। এখনো সেই রেশ কাটেনি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৮ মে ইটালি ফেরত প্রথম ৩ জন বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে দেশে করোনা থেকে বাঁচতে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। এমনকি সরকারী ও বেসকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে করোনা সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশে আরো কয়েকজন করোনা রোগী শনাক্ত হলে মার্চ মাসের শেষের দিকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর রোধে দেশের সকল স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই থেকে এখনো সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে শিক্ষানগরী রাজশাহী শূণ্য হয়ে পড়ে। এর মাত্র কয়েকদিন পর ১২ এপ্রিল রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় প্রথম করোনা শনাক্ত হয় নারায়ণগঞ্জ ফেরত একব্যক্তির শরীরে। পরে স্থানীয় প্রশাসন ওই ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে দেয়। পাশাপাশি এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এরপরে
ঢাকা ফেরত অপর একজনের করোনা শনাক্ত হয়। একই উপজেলায় পর পর দুইজনের করোনা শনাক্ত হলে রাজশাহী জেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে দেয়া হয়। জরুরী সেবা এ লকডাউন আওতার বাইরে ছিল। লকডাউন ঘোষণার পর অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়া মানুষকে ঘরে ফেরাতে পুলিশ, র্যাব, জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে নামে। সেনাবাহিনীর সদসর্যা অপ্রয়োজনে বাড়ির বাড়ির বাইরে বের হওয়া মানুষকে ঘরে ফেরানোর জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। এমনকি অযথা বাইরে ঘোরাফেরাকারীদের লঘু শাস্তিও দেয়া হয়। ফার্মেসী ছাড়া মার্কেটের কোন দোকানপাট খুলতে দেয়া হয়নি। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান খোলা ছিল। এ সময়ে লকডাউন থাকায় খেটে খাওয়া মানুষরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। সরকারে পক্ষ থেকে চাল বিতরণ করা হলেও তা ছিল অপ্রতুল। এরমধ্যেই রাজশাহীতে প্রথম করোনা ভাইরাসে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যু হয়। ২৬ এপ্রিল সকালে রাজশাহী সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে (আইডি) আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তির নাম ছিল আব্দুস সোবহান (৮০)। তার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গাওপাড়া গ্রামে। ৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে তার মৃত্যু হয়। মৃত রোগীর ছেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল, চিকিৎসকরা তেমনভাবে চিকিৎসা করেনি তার বাবাকে। সেখানে
অনেক অবহেলা ছিল চিকিৎসকদের। জেলায় করোনা শনাক্ত হলেও মহানগরে কোন করোনার রোগী ছিলনা। কিন্ত জেলার মাত্র ১ মাস পরে মহানগরীতে ১৫ মে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তারপর থেকে রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে। একমাস পরে নগরে করোনা শনাক্ত হলেও জেলার চাইতে মহানগরে কয়েক গুণ বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যুর হারও বেশি। রাজশাহী জেলার ৯ টি উপজেলায় ১৪৬৫ জন ও মহানগরীতে রোগী রয়েছে ৪ হাজার ৩৪৩ জন। শনাক্তের বেশির ভাগ রোগী রাজশাহী মহানগর এলাকার। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেয়া হলেও মানা হচ্ছেনা। যত্রত্রত মানুষের জটলা। অনেকেই মানছেনা স্বাস্থ্যবিধি।
এদিকে, মে ও জুন মাসে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়লেও সারাদেশে লকডাউন শিথিল করে ব্যবসা বাণিজ্য ও দোকানপাট খুলে দেয়া হয়। এ সময় ব্যাপক মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তবুও দোকানপাট খুলে দেয়া হয়। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজশাহীতে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালের পুরো নয় মাস করোনায় আতঙ্কে কেটেছে রাজশাহীবাসীর বছর। এখনও আতঙ্ক কম নেই। তবুও জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ কর্মে ফিরেছে। রাজশাহী জেলা ও মহানগর মিলিয়ে মোট ৫ হাজার ৮০৮ জন করোনা রোগী। এরমধ্যে মহানগর এলাকায় ৪৩৪৩ জন, বাঘা উপজেলায় ১৮৪ জন, চারঘাট উপজেলায় ১৭৭ জন, পুঠিয়া উপজেলায় ১৫১ জন, দুর্গাপুর উপজেলায় ৮৬ জন, বাগমারা উপজেলায় ১২২ জন, মোহনপুর উপজেলায় ১৪০ জন, তানোর উপজেলায় ১১৯ জন, পবা উপজেলায় ৩৩২ জন ও গোদাগাড়ীতে ১৫৪ জন। জেলার ৯টি উপজেলায় ১৪৬৫ জন শনাক্ত হয়েছে।
এস/আর
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০