ওমর ফারুক:
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের উপজেলায় ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। করোনা ভাইরাস তিন মাসের মাথায় রাজশাহী মহানগরীতে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করলেও এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও রাস্তার পাশে খোলাভাবে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের তেলে ভাজা মুখরোচক খাবার। আর ক্রেতারা নির্ভিঘেœ এটি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন। অথচ যারা এটি তৈরি করে বিক্রি করছেন তাদের হাতে গেøাবস ও মাস্ক নেই। যে ক্রেতাদের খাবার দিচ্ছেন তাদের হাতেও গেøাবস ও মাস্ক নেই। খোলা খাবার সবসময়ের জন্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি হলেও এই করোনার মধ্যে তা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্যরে দাবি, এটি সম্পূর্ণ অনিরাপদ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। একজনের শরীরে
করোনার উপস্থিতি থাকলে তা সবার শরীরে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। এতে অনেক মানুষ অনিরাপদ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। তাই এই সময়ে খোলা রাস্তার খাবার বর্জন ও আরো বেশি সচেতনতা বাড়াতে হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সরজমিনে রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে সিঙ্গাড়া, পুরি, পিয়াজু, সামুচা, পাখির চপ ও বিভিন্ন ধরণের চপ বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা সেখানেই ক্রেতাদের সামনে সেগুলো তৈরি করছেন আর ক্রেতারা তা খাচ্ছেন। যাকে এ খাবারগুলো তৈরি করতে দেখা গেছে তার গেøাবস ও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। আর তার দোকানের কর্মচারী অর্থাৎ যে ব্যক্তি ক্রেতাদের খাবার দিচ্ছে তার মুখেও মাস্ক দেখা
যায়নি। সম্পূর্ণ অনিরাপদ ও ক্রেতাদের স্বাস্থ্যঝুকির মধ্যে ফেলে এ খাবার তৈরি করতে দেখা যায়। তবে অসচেতন ক্রেতাদের সেই খাবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনায়াসে খেতে দেখা যায়। শুধু জিরোপয়েন্ট এলাকার ওই দোকানই নয় বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া নগরীর মনিচত্বর ও জিরোপয়েন্ট এলাকার কিছু ছোট হোটেলের সামনে সিঙ্গাড়া ও পুরিসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি করে দোকানের সামনে খোলাভাবে রেখে বিক্রি করতে দেখা যায়। জনাকীর্ন এলাকা হওয়ায় যারা সেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করবে তাদের হাঁচি-কাশি সেই খাবারে চলে যেতে পারে।
শুধু এই এলাকায় নয় নগরীর লক্ষীপুর এলাকাতেই একই অবস্থা দেখা যায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনেও রাস্তায় খোলাভাবে খাবার বিক্রি করতে দেখা যায়। উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালে প্রায় ২০/২১ টি জেলার রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন প্রতিদিন। বাইরে মানুষের নিত্য আনাগোনা থাকলেও বিক্রেতা একটু লাভের আশায় খোলাভাবে খাবার বিক্রি করছেন। এ এলাকায় হোটেলগুলোর সামনে মুখরোচক
কিছু ভাজাপোড়া খাবার খোলাভাবে রাখতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া নগরীর কুমারপাড়া, ডিঙ্গাডোবা, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা খোলাভাবে খাবার বিক্রি করতে গেছে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এভাবে খাবার বিক্রি হওয়ার কারণে ক্রেতারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। আর বর্তমান সময়ে রাজশাহীতে করোনা সংক্রমনের হার অনেকটাই বেড়েছে। ক্রেতারা অসচেতন হওয়ায় এ খাবারগুলো কিনে খাচ্ছেন। সচেতন মানুষজন বলছেন, এসব খাবার বিক্রি হলেও নিজের স্বাস্থ্য ও নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য বাইরে খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরের খাবারের সাথে সাথে রাস্তার পাশের খোলা খাবার কোনভাবেই খাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলায় এখন পর্যন্ত ১৫৬ জন করোনা রোগী সংক্রমিত হয়েছেন। সুস্থ্য হয়েছেন ৪৯ জন। তবে প্রতিদিনই ১০/১১ জন মানুষ করোনা পজিটিভ হচ্ছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন রাজশাহীর উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারি বলেন, রাস্তায়
খোলা খাবার বিক্রি না করার জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি। যারা রাস্তার পাশে খাবার রাখছে বা বিক্রি করছে তাদের আবার এ ব্যাপারে সাবধান করে দেয়া হবে। যাতে তারা এমন না করে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বলেন, রাস্তার পাশের খোলা খাবার সম্পূর্ণ অনিরাপদ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। কোনভাবেই এখন বাইরেরর খাবার খাওয়া যাবে না। আমিও বিভিন্ন জায়াগায় এভাবে খাবার বিক্রি করতে দেখেছি। মানুষকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। কোন লিপটের একজন যদি করোনা পজিটিভ থাকে তাহলে মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে লিফটে যারা থাকবে তাদের সবার শরীরে ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে। যারা খাবার এভাবে দিচ্ছে বা যারা দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছে তাদের একজনের থাকলে সবার মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। মানুষের জন্য এটা সম্পূর্ণ ক্ষতিকর। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। যাতে কেউ এভাবে মানুষের স্বাস্থ্যহানিকর খাবার কেউ বিক্রি করতে না পারে। মানুষকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। নিজের নিরাপত্তার জন্য এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
এমকে
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- k24ghonta@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০