নিজস্ব প্রতিবেদক : নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে 'বেকুব' বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাজাহান খান।শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে ফেডারেশনের বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, যেই বুদ্ধিজীবীরা পরিবহন শ্রমিকদের দেখতে পারে না। তারা মনে করে যে, পরিবহন শ্রমিকদের ফাঁসি দিলেই বোধ হয় সব দুর্ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশে এইটা যারা বলেন, তারা হাস্যকর কথা বলছেন। পৃথিবীতে বহু দেশেই তো হত্যা যারা করেন, ফাঁসির আইন আছে না? তার জন্য কি খুন বন্ধ হয়ে গেছে?
শাজাহান খান বলেন, সড়ক পরিবহন আইনটি একটা প্রেক্ষাপটে তাড়াহুড়ো করে পাস করতে হয়েছিল। ঢাকায় একজন ছাত্র এবং একজন ছাত্রী গাড়িচাপায় যে মারা গেল মহাখালীতে, তার পরের পরিস্থিতি আপনাদের জানা আছে।তিনি বলেন, যুগোপযোগী আইন করার জন্য ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমরাই কিন্তু দাবি তুলেছিলাম। এরশাদ সাহেবের শাসনামল থেকে আমরা বলে আসছি যুগোপযোগী আইন করতে হবে। তারপর অনেক সরকার পার করলাম। শেখ হাসিনার সরকারে এসে আমরা সেই আইন পাস করাতে পেরেছি। এর মধ্যে সংশোধনীগুলো আমরা দিয়েছি সরকারের কাছে। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরেছি। তিনজন মন্ত্রী এই কমিটির মেম্বার ছিলেন, সচিব ছিলেন কয়েকজন। তারা সকলেই কিন্তু আমাদের দাবির যে দিকগুলো যৌক্তিক সেগুলো গ্রহণ করছেন। আশা করছি- আগামী সংসদ অধিবেশনে বা বাজেট অধিবেশনে সংশোধনীগুলো পাস হবে।
সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চন একজন বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ। উনি বলেন, এই আইন যদি সংশোধন হয় তাহলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। কত বড় বেকুব হলে এ কথা বলতে পারে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই! ওই আইনের মধ্যে আছে- আপনি যদি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেন তাহলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। আপনি যদি যেখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পারাপার হন, ওটা কিন্তু ট্রাফিক রুল ভঙ্গ করা হলো। তাহলে ওই রুল যে ভঙ্গ করবে তারও ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। বলেন তো, এটা কি যৌক্তিক? আমরা সে ক্ষেত্রে বলেছি- এটা হতে পারে না। আমরা সেটাকে কমিয়ে আনার জন্য বলেছি। এটাকে এক হাজার বা পাঁচ শ'র মধ্যে আনতে হবে। যারা বলেন সংশোধন দরকার নেই, তারা মূলত আইনই পড়েননি।
শাজাহান খানের বক্তব্য শেষ হলে মঞ্চের সামনে গিয়ে একজন শ্রমিক তার কাছে জানতে চান, ইলিয়াস কাঞ্চনের শাস্তি কেন হলো না। জবাবে শাজাহান খান বলেন, আমরা এর মধ্যে সরকারকে বলে দিয়েছি- ইলিয়াস কাঞ্চন কোনো প্রগ্রামে থাকলে আমরা মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সে প্রগ্রামে যাব না। ২২ অক্টোবর সড়ক নিরাপত্তা দিবস, সেখানে আমরা যাইনি। কোনো শ্রমিক যায়নি, নেতারাও যায়নি। একটা কথা শুধু বলে রাখি আপনাদের, আমি এ সমস্ত কথা বলার কারণে আমার বিরুদ্ধে একটা মামলা দিয়েছে, ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা। মামলাটি চলমান। সেই মামলার একজন উকিল এখানে উপস্থিত। আপনারা দোয়া করবেন মামলায় ওকেই বরং পরাজিত করে তার কাছেই আমরা ক্ষতিপূরণ চাইব।
তিনি বলেন, আর একটা কথা বলে রাখি- তিনি (ইলিয়াস কাঞ্চন) শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কঠোর যা যা করা যায় সবকিছুর জন্য নানাভাবে অবাস্তব প্রস্তাব দিয়েছেন। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করব। উনি তো শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন, কোথাও শ্রমিক ইউনিয়নে জায়গা দেবেন না তাকে।
নগরীর নওদাপাড়ায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ফেডারেশনের রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটি এর আয়োজন করে। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক শিমুল বিশ্বাস ও জয়পুরহাট জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক। সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবদুল লতিফ মণ্ডল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী।
এস/আর
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০