খবর২৪ঘণ্টা,আন্তর্জাতি ডেস্ক: ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে সোমবার বলা হয়েছে, সরকারবিরোধী টানা বিক্ষোভের চতুর্থদিন রোববার সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে।
দেশজুড়ে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। অর্থনৈতিক সংকট ও জীবনযাত্রার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ ইরানিদের এই বিক্ষোভকে ২০০৯ সালে সংস্কারপন্থী মিত্রজোট ক্ষমতায় আসার পর এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ হিসেবে বলা হচ্ছে।
সোমবার আরো জোরালো বিক্ষোভের ডাক দেয়ায় দেশটিতে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিতিশীলতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিক্ষোভে ক্ষয়ক্ষতির ফুটেজ দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলছে, দুর্ভাগ্যবশত গত রাতের ঘটনায় কয়েকটি শহরে প্রায় ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে তাদের প্রাণহানির ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা স্বাক্ষরহীন এক বিবৃতিতে রাজধানী তেহরানসহ অন্য ৫০টি শহরে আবারো বিক্ষোভে অংশ নিতে ইরানিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ওপেকভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান তেল উৎপাদনকারী ও আঞ্চলিক ক্ষমতাধর ইরান। প্রতিদ্বন্দ্বি সৌদি আরবের সঙ্গে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে সিরিয়া ও ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় দেশটিতে হতাশা বাড়তে থাকে।
দেশের বাইরে হস্তক্ষেপের এসব ঘটনায় ইরানের মানুষের ক্ষোভে জ্বালানি যোগ করেছে। ইরানিরা বলছেন, তারা চান প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার চেয়ে নেতারা দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।
দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দেশটির মাশাদ শহরে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য শহরেও, রূপ নেয় রাজনৈতিক সমাবেশে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির অভিযোগে মাশাদে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির আরো বেশ কয়েকটি বড় শহরে তা ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভের পেছনে বিদেশি শক্তি ও বিপ্লববিরোধীদের মদদ রয়েছে বলে দাবি করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন শহরে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিবিরোধী স্লোগান দিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের অনেকের মুখে ‘মানুষ ভিক্ষা করছে, নেতারা ঈশ্বরের মতো কাজ করছেন’ স্লোগান শোনা যায়। বিক্ষোভ থেকে ইরানের পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতাও করছেন অনেকে। মাশাদ শহরে অনেকেই ‘লেবানন নয়, গাজা নয়, ইরানের জন্য আমার প্রাণ’ স্লোগানও দেয়। দেশটির অভ্যন্তরীন সংকটের চেয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে ইরানের পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরছেন তারা।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, অর্থনৈতিক দূরবস্থা ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়েছেন তারা। তরুণদের বেকারত্বের হার গত বছর ২৮ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি শান্ত থাকার আহ্বান জানানোর পরও রোববার রাতভর বিক্ষোভ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে রুহানি বলেছেন, কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করার অধিকার আছে ইরানিদের। তবে কঠোর হাতের দমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস, আইন লঙ্ঘন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রতি কোনো ধরনের সহনশীলতা দেখাবে না সরকার।’ দেশটিতে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকশ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে ব্যাপক সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০