বিশেষ প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগরীর বাইরে থেকে নগরীতে প্রবেশ করা গাড়ী ও ট্রান্সপোটের গাড়ীর কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের টিআই ওয়ান মোফাক্কারুলের বিরুদ্ধে। নিজস্ব লোক ও দালালের মাধ্যমে এ চাঁদা তোলা হয়। ফুটপাত সহ অন্যান্য খাত থেকে চাঁদা আসলেও মূলত পরিবহন খাত থেকে বেশি চাঁদা আসে বলেই একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রতি মাসে এর আনুমানিক পরিমাণ কয়েক লাখ টাকার মতো। চাঁদার এই পুরো টাকাটাই আসে বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন, বিভিন্ন ট্রান্সপোটের গাড়ী ও নগরীর ফুটপাত, ইমাগাড়ী, অটোরিক্সাসহ অন্যান্য খাত থেকে। প্রতি মাসের শুরুতেই এই চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে হয়। চাঁদা দিতে দেরি হলে তোড়জোড়ও করা হয় বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাস মালিক সমিতির এক নেতা জানান, বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রতি মাসে নির্ধারিত টাকা দিতে হয় ট্রাফিক বিভাগকে। এই চাঁদা দেওয়ার কারণ হলো, ফিটনেসবিহীন গাড়ী চলাচল করতে দেওয়া। শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও চাঁদা দেওয়া হয়। প্রতি মাসে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের টিআই-১ এর নিজস্ব লোক দ্বারা চাঁদা নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, আরএমপির ট্রাফিক বিভাগে মূল দায়িত্বে আছে জন ট্রাফিক পরিদর্শক। অনেক সিনিয়র পরিদর্শকে ডিঙ্গিয়ে তিনি টিআই-ওয়ানের মত হাতিয়ে নিয়েছেন। ৮৫ ও ৮৬ এর ব্যাচের সিনিয়র পরিদর্শক রয়েছে। কিন্তু বর্তমান টিআই-ওয়ান মোফাক্কারুল জুনিয়র হওয়া সত্বেও টিআই ওয়ানের দায়িত্ব পান। তিনি এর আগে রাজশাহীতে সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি টিআই ওয়ানের দায়িত্বের পাশাপাশি নিজেই ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। যা সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ। ক্যাশিয়ার পদ বলে কোন পদ ট্রাফিক বিভাগে নেই।
তথ্য দেওয়া সুত্রটি নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে জানান, রাজশাহী নগরীতে প্রবেশ করা বিভিন্ন ট্রান্সপোটের গাড়ীর কাছ থেকেও টোকেনের মাধ্যমে ২২০ টাকা করে নেওয়া হয়। এর মধ্যে দালালের ২০ টাকা ও ট্রাফিক বিভাগের ২০০ টাকা থেকে। নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১২০টি ট্রান্সপোটের গাড়ী ঢোকে। এ ছাড়া ৬টি মাইক্রোস্ট্যান্ড থেকে নেওয়া হয় ৪ হাজার টাকা করে। এটাও দালালের মাধ্যমে নেওয়া হয়।
সিএনজি, অটোরিক্সা সহ অন্যান্য গাড়ীর কাছ থেকেও প্রতি নির্ধারিত হারে মাসোয়ারা নেওয়া হয়। এর সবগুলোই দালালের মাধ্যমে নেওয়া হয়।
নগরীর প্রবেশমুখ ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ট্রাফিক বিভাগের দালাল দাঁড়িয়ে থেকে টোকেনের মাধ্যমে এই চাঁদা নিয়ে থাকে। এ ছাড়া রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রাক ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সেই নিয়ম অমান্য করে ট্রাক মাল আনলোড করে। কারণ তারা ট্রাফিক বিভাগ কে মাসোয়ারা দেয়।
নিরাপত্তার স্বার্থে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাস মালিক সমিতির এক নেতা জানান, প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়েই চাঁদা দিতে হয়। এর ব্যতিক্রম হলেই ঝামেলা করা হয়। আর মাইক্রোস্ট্যান্ডের এক চালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, প্রতি মাসে স্ট্যান্ড থেকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়।
এদিকে, বিভিন্ন স্থান থেকে মাসোয়ারা নেওয়া হলেও যানযট নিরসনে তেমন ভূমিকা দেখা যায় না। নগরজুড়ে অযান্ত্রিক যান চলাচল করলেও কোন পদক্ষেপ নেয় তার।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরেক ট্রান্সপোর্ট চালক বলেন, টোকেনের মাধ্যমে টাকা নিয়ে থাকে। আমাদের টাকা দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে টিআই ওয়ান মোফাক্কারুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ধরণের কোন টাকা তোলা হয় না। তাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হেমায়েত উল্লাহ বলেন, সিনিয়র ট্রাফিক পরিদর্শকদের টিআই ওয়ান দায়িত্ব পাওয়ার কথা। কিন্ত সিনিয়র ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করতে অপারগতা প্রকাশ করলে জুনিয়র কেউ পেয়ে থাকে। ক্যাশিয়ার কোন পদ ট্রাফিক বিভাগে নেই। ক্যাশিয়ার হয়ে থাকলে এটা অভ্যন্তরীণ। আর এসব চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দিনের বেলা কোন ট্রাক প্রবেশ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/আর
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০