খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ খুলনা উপকূল হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানবে। আঘাত হানার সময় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসসহ ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ।
দুই সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানোর পর বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভায় একথা জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ।
সভায় তথ্য বিশ্লেষণ করে সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ খুলনা অঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় এসে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারারাত পুরো বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকবে। এই সময়টা আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল সময়।
‘এ সময়ে যারা উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করেন তারা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসসহ উচ্চগতির বাতাস, দমকা ঝড়ো হাওয়ার সম্মুখীন হবে। এই সময়ে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে, শেল্টারে থাকতে হবে।’
সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি অগ্রসর হতে হতে ৮৫০ কিলোমিটারের মধ্যে এসেছে। ভারতীয় উপকূল স্পর্শ করে করে অগ্রসর হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ খুলনা দিয়ে উপকূল স্পর্শ করে সারারাত বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি বলেন, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি সাগরে আছে। সেটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অবস্থান করছে। সাগরে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০-১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত, এটি একটি অত্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়টি যখন বাংলাদেশে থাকবে তখন ১০০-১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ থাকতে পারে। সেটি আমাদের জন্য আশঙ্কার বিষয়। এজন্য আমাদের যোগাযোগ প্রস্তুতি থাকা সঠিক মনে করি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, এখনও মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার সময় আসেনি। রাতের মধ্যে তথ্য বিশ্লেষণ ও ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি দেখে হয়তো শুক্রবার সকালে সেই সংকেত দিতে হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি ও সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করতে হবে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯ উপকূলীয় জেলায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গে তারা মানুষদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসবে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় তিন হাজার ৮৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রই প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ভালো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, আমরা মোকাবিলা করতে পারবো, প্রাণিসম্পদও রক্ষা করতে পারবো। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি; তারা যেন দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন।
শুক্রবার সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দোয়া করার আহ্বান জানান ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সার্বিক সমন্বয় করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লন্ডন যাওয়ার আগে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৯ জেলার ডিসিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছি, তারা পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের প্রস্তুতি ভালো। প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা আগেভাগে সংবাদ পাচ্ছি, আন্তঃদেশীয় তথ্য বিনিময় হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক রাখা হয়েছে যেন দুর্যোগ প্রশমিত হয়, জানমাল রক্ষা পায়।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের রক্ষায় সমন্বতিভাবে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান মুখ্য সচিব।
এদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় উপকূলবর্তী সব স্কুল-কাম সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০