মাজহারুল ইসলাম,লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: ৪০ দিন আগে মিলে আখ বিক্রি করেছি, এরই মধ্যে আরো ২৫ গাড়ি আখ মিলে বিক্রি করেছি কিন্তু গত ২ ফেব্রæয়ারী থেকে অদ্যবোধি অর্থাৎ ১৪ মার্চ পর্যন্ত মিল থেকে কোন টাকা পাইনি। কিভাবে কামলার পাওনা, আখ পরিবহনের ভাড়া, জমির পরিচর্চা, ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ ও সংসার চালাবো তা বুঝে উঠতে পারছিনা, কবে পাবো আখ বিক্রয়ের টাকা? এমনই হতাসার কথা জানালেন নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিঃ (এনবিএমএম) এ আখ সরবরাহকারী আখচাষী কামাল আহমেদ। শুধু কামাল আহমেদ নয় এমন প্রশ্ন নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ১৭ হাজার আখচাষীদের। আখ চাষীরা তাদের বিক্রি করা আখের টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস লিঃ উপজেলার তথা দেশের সবচেয়ে বড় চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে এখানকার প্রধান ফসল হয়ে উঠেছে আখ। আখ বিক্রি করেই আখ চাষীরা তাদের সকল প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। আজ এই আখ কৃষকের গলার কাটা হয়ে বিধেছে। প্রায় দেড় মাস ধরে কৃষকরা মিলে তাদের উৎপাদিত আখ সরবরাহ করে আসছে অথচ তারা তাদের বিক্রি করা আখের টাকা পাচ্ছেনা। ফলে একদিকে যেমন আখ চাষীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে অপর দিকে পাওনা টাকার অভাবে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সালামপুর গ্রামের আখচাষী আমজাদ হোসেন জানান, প্রায় দেড় মাস আগে আমি মিলে আখ বিক্রয় করেছি এবং এখনও করছি, কিন্তু উক্ত সময় হতে আজ পর্যন্ত আমি আখের টাকা পাইনি, কবে পাবো তাও জানিনা, আাখের টাকা না পেয়ে সংসার চালাতে গিয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছি। দুয়ারিয়া গ্রামের জমসেদ আলী, মধুবাড়ী গ্রামের মকবুল হোসেনসহ একাধিক কৃষক জানান, এক গাড়ি আখ মিলে সরবরাহ করতে খরচ (আখ কাটা ও পরিবহনে) হয় এক হাজার টাকা, যা আখের টাকা পেলে তাদের পরিশোধ করা হতো। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে আখের টাকা না পাওয়ায় বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে সে টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে,অথচ আমার নিজের পাওনা টাকা পাচ্ছিনা।
লালপুরের আখচাষী ইনছার আলী, গৌরীপুরের সাবের আলীসহ একাধিক আখচাষীরা জানান, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংক শিওর ক্যাশের মাধ্যমে আখের মূল্য পরিশোধ করায় টাকা উত্তলোন সহজতর হলেও কর্তৃপক্ষের টাকা পরিশোধে বিলম্বের কারনে আখচাষীরা মহা বিপদে পড়ছে। তারা আরো জানায়, আখের টাকা প্রতিদিন পরিশোধের ক্ষেত্রে বর্তমানের পদ্ধতি ভালো, কিন্তু পরিশোধে দেরী হলে বর্তমান পদ্ধতিটি খুব কাজে আসেনা। আগে মিলে আখের মূল্য পরিশোধে দেরী হলে প্রয়োজনে কমিশনে দিয়ে বিল ভাঙ্গানো যেত কিন্তু এখন তাও সম্ভব হচ্ছেনা।
চিনিকলের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ আখ মাড়াই মৌসুমে ১৮৫ কর্ম দিবসে ২লাখ ৯৬ হাজারমেট্রিকটন আখ মাড়ায়ের লক্ষ মাত্রা নির্ধারন করে মাড়াই মৌসুম শুরু করে। এর মধ্যে আখ চাষীদের কাছ থেকে ক্রয়ের লক্ষমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ মেট্রিকটন। বাকি আখ মিলের নিজস্ব খামার থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রথম দিকে প্রায় নিয়োমিত কৃষকদের টাকা দিলেও টাকার অভাবে মিল কর্তৃক্ষ গত ২ ফেব্রæয়ারী থেকে মিল কর্তৃপক্ষ আখ চাষীদের পাওনা পরিশোধ বন্ধ করে দেয়। ফলে এখন (১৪মার্চ) পর্যন্ত আখ চাষীদের পাওনা দাড়ায় সাড়ে ২২ কোটি টাকায়।
দেশের সর্ববৃহত ও উপজেলার ভারী এ শিল্প প্রতিষ্ঠান নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস কে সচল ও টিকিয়ে রাখতে এলাকাবাসি বদ্ধপরিকর। তাই দীর্ঘ দিন ধরে আখ বিক্রির টাকা না পেয়েও তারা মাড়াই কলে আখ বিক্রি না করে মিলে আখ সরবরাহ করছেন বলে জানিয়েছেন আখ চাষীরা। তবে আখ চাসীদের দুর্দসা ও দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে খুব দ্রæত তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য প্রয়োজণীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেছেনে সংশ্লিষ্টদের কাছে এবং এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। এছাড়া এ চিনিকলটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে খুব দ্রæত চিনিকলের সাথে শংশ্লিষ্ট ডিস্টিলারী, র সুগারসহ শিল্প পার্কের প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করার জন্য দাবী করেন তারা।
কৃষকের আখের দাম পরিশোধের ব্যাপারে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদের জানান, আখ চাষীদের পাওনা পরিশোধের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ চাওয়া হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সে অর্থ পাওয়া যায়নি, অর্থ পেলেই চাষীদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। কবে নাগাদ কৃষকরা তাদের পাওনা টাকা পাবে এমন প্রশ্নের জবাবে সুনিদ্রিষ্টবাবে কিছু জানাতে পারেননি তিনি , তবে খুব শিঘ্রই প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যাবে বলে এ প্রতিবেদকে জানিয়েছেন তিনি।
খবর২৪ঘন্টা/নই
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০