ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু তামিমা সুলতানা তাম্মীর বিয়ে অবৈধ বলে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পিবিআই। সেই প্রতিবেদনে নাসির হোসেন, তামিমা সুলতানা তাম্মী এবং তামিমার মা সুমি আক্তারকে দোষি উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নাসির তামিমার সঙ্গে ‘অবৈধ বৈবাহিক সম্পর্ক’ স্থাপন করেছেন। যে কারণে এই ৩ জনের শাস্তির সুপারিশ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী কি শাস্তি হতে পারে তা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই’র প্রধান (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার। এ সংক্রান্তে পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট হাতে এসেছে। যে তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে (সিএমএম) জমা হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার সকালেই।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে স্বল্প পরিসরে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছিলেন নাসির-তামিমা। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে উভয়ের পরিবারের লোকজন এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এরমধ্যে ওই অনুষ্ঠানে তামিমার মা সুমি আক্তারকে ড্যান্স দিতেও দেখা গিয়েছিলো, যা ইউটিউবে দৃশ্যমান।
অবৈধ বৈবাহিক সম্পর্ক, আইনে যে শাস্তি
মুসলিম আইন অনুযায়ী, ‘এ রকম বিয়ে বৈধ বলে গণ্য হবে না। এই বিয়ে বাতিল বা অবৈধ বিবাহ বলে গণ্য হবে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে করতে চাইলে প্রথমে তাকে ডিভোর্স নিতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট সময় অতিক্রমের পর সেই নারী বিয়ে করতে পারবে। চাইলেই ডিভোর্সের পরদিনই বিয়ে করতে পারবে না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
১৮৬০-এর ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ ধারা পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ আইনের ৪৯৪ ধারা অনুসারে, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পুনরায় বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উক্ত ধারা মোতাবেক, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকাবস্থায় পুনরায় বিয়ে করলে, তা সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এবং এই অপরাধ প্রমাণিত হলে, প্রতারণাকারী স্বামী বা স্ত্রী ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।
তবে, এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যদি স্বামী বা স্ত্রী ৭ বছর পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকেন এবং জীবিত আছে মর্মে কোন তথ্য না-পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে পুনরায় বিয়ে করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। এছাড়া কোন স্বামী বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের অনুমতি নিয়ে বিশেষ কোন কারণ দেখিয়ে বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে সালিসি পরিষদের কাছে আবেদন করলে সালিসি পরিষদ তা যাচাই সাপেক্ষে, পরবর্তী বিয়ের অনুমতি দিতে পারে। সেক্ষেত্রে পুনরায় বিয়ে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
আগের বিয়ের কথা গোপন রেখে, প্রতারণার মাধ্যমে যদি পুনরায় বিয়ে করে তবে যাকে প্রতারণা করে বিয়ে করা হল- তিনি অভিযোগ করলে তা ৪৯৫ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। আবার কেউ জেনে শুনে, অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করলে উক্ত বিয়ে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা মোতাবেক সম্পূর্ণ বাতিল বিয়ে। এক্ষেত্রে, তা দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারা মোতাবেক ব্যভিচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধ প্রমাণ হলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড হতে পারে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সাধারণতঃ ডিভোর্স কার্যকর হতে ৩ মাস সময় লাগে। তাই শুধু ডিভোর্স দিলেই হবে না। ডিভোর্স কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় বিয়ে করার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট মামলার বাদী ব্যবসায়ী রাকিব হাসান ও তামিমা তাম্মীর সংসারে ৮ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। আর সেই স্বামী-সন্তানকে ফেলে এসে নাসিরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তামিমা।
রাবিক বলছেন, তামিমার সঙ্গে ১১ বছরের দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন তিনি। তামিমা তাকে তালাক না দিয়েই ক্রিকেটার নাসিরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
রাকিব হাসান আরও বলেন, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ৩ লাখ টাকা দেনমোহরে তামিমার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর অনেক বছর তামিমার পক্ষের কোনো আত্মীয়স্বজনের দেখা পাইনি। বছরচারেক আগে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তামিমাকে সৌদি এয়ারলাইন্সে চাকরি পাইয়ে দিই। এই চাকরি পাওয়ার পর থেকেই সে (তামিমা) বদলে যেতে থাকে। সূত্র-আরটিভি
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০