খবর ২৪ঘণ্টা ডেস্ক: গোটা বিশ্ব যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) বিচার প্রার্থনার সর্বোচ্চ এবং নির্ভরযোগ্য জায়গা বলে মেনে চলে, সেই সর্বমান্য আদালতকেই নিষেধাজ্ঞার খড়গে ফেলার হুমকি দিয়ে বসলো যুক্তরাষ্ট্র।
কোনো আমেরিকানকে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করতে চাইলে আন্তর্জাতিক আদালতকে এ নিষেধাজ্ঞার তরবারির মুখে পড়তে হবে বলে নজিরবিহীন হুমকিটি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।
গত বছর আন্তর্জাতিক আদালতের আইনজীবীরা আফগানিস্তানে সম্ভাব্য ‘বন্দি-নিপীড়নের’ বিচারের আলোচনা তোলেন। আইসিসির আইনজীবী ফাতৌ বেনসৌদা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিতে আফগানিস্তানে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানানোর পর সম্প্রতি আইসিসিও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সন্দেহভাজন মার্কিন সেনাদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগের কথা জানায়।
এই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালতের পুরনো ও কড়া সমালোচক বোল্টন বলেন, ‘এই আদালত অবৈধ। আর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে বিচারের মুখোমুখি করতে গেলে এই আদালতকেই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হবে। যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হেগভিত্তিক এ আদালতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই সদস্যপদ নিলেও গা বাচিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভিসমেনদের (সেনা) বিচারের মুখোমুখি করার পটভূমি তৈরির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘না আফগানিস্তান, না এই আদালতের সদস্য কোনো দেশ এ ধরনের অনুরোধ করেছে। (তবু কেন তারা এমন উদ্যোগ নিলো?)
বোল্টন কড়া ভাষায় বলেন, ‘এমন কিছু করতে চাইলে আমরা আইসিসিকে সহযোগিতা করবো না। আমরা তাদের কোনো সহায়তা করবো না, আইসিসিতে যাবোও না আমরা। তারা জাহান্নামে গেলেও আমরা দেখবো না। সবশেষ কথা হলো, আইসিসি আমাদের কাছে অস্তিত্বশূন্য বিষয়।’
আন্তর্জাতিক আদালতের সংশ্লিষ্টদের নিষেধাজ্ঞার ধরনও স্পষ্ট করে দেন বোল্টন। তিনি জানান, আমেরিকান কোনো নাগরিকের বিচার করার চেষ্টা হলে আইসিসির বিচারক ও আইনজীবীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেখানে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া হবে। উল্টো তাদেরই আমেরিকান ফৌজদারি আইনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। আমেরিকান নাগরিকদের বিরুদ্ধে তদন্তে যারা সহায়তা করবে, সেই কোম্পানি, গোষ্ঠী বা দেশকেও এমন পরিণতির শিকার হতে হবে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার কারণেই সম্প্রতি ওয়াশিংটনে তাদের কূটনৈতিক মিশন বন্ধ ও তাদের জন্য ত্রাণ-সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বোল্টন।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ (যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে নালিশ করা) আমেরিকান সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি। আর আমেরিকান সংবিধানের চেয়ে কোনো কিছুকেই ওয়াশিংটন প্রশাসন বড় করে দেখে না।’
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলেন, ‘আইসিসির অন্যায্য বিচারের হাত থেকে আমাদের নিজেদের ও বন্ধুরাষ্ট্রের নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবেন।’
বোল্টন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করেন। সেসময় তিনি যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্টের আগ্রাসী প্রতিরক্ষা নীতির পাঁড় সমর্থক ছিলেন। এমনকি সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে যে ধারণা তৈরি করে ইরাক আগ্রাসনের পটভূমি প্রস্তুত করা হয়, সেক্ষেত্রেও এই কট্টর নব্য-রক্ষণশীল কূটনীতিকের ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। যদিও পরে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার ধারণা ভুল প্রমাণ হয়, তারপরও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন বোল্টন।
এই বোল্টনকে চলতি বছরের মার্চেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে বসান আমেরিকান শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাসী ট্রাম্প। এ পদে বসে নিয়মিতই আগ্রাসী কথাবার্তা বলে চলেছেন ৬৯ বছর বয়ী বোল্টন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের বিরুদ্ধে তার এই হুমকি-ধামকিকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করছে বিশ্ব সংবাদমাধ্যম। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অ্যাসোসিয়েট ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস ডিরেক্টর লিজ এভেনসন বলেন, এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে নৃশংস অপরাধের শিকার মানুষগুলোকে নিদারুণভাবে অবজ্ঞা করেছেন বোল্টন।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০