অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের স্থায়ী আবাসন ও তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে সরকার। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে এই ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গেছে।
শনিবার (২ এপ্রিল) বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে নিয়ে আসার জন্য সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা বিশেষ প্রতিভার অধিকারী হয়। তাদের সঠিক যত্ন নেওয়া হলে সে প্রতিভা বিকাশ সম্ভব।
খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারকদের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্টিফেন হকিংসহ অনেকের এই বৈশিষ্ট্য ছিল। কিন্তু তারা তো তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। সুযোগ পেলে আমাদের এই শিশু-কিশোররা রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে।
এ সময় অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের আপন করে নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় তাদের বিষয়ে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। আগে তো বড় পরিবার ছিল, সেখানে সবার সঙ্গে মিশে এটি ওভারকাম করা গেছে। এখন ছোট পরিবারে এটি দুষ্কর হয়ে গেছে। এ জন্য সব জায়গায় তাদের বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। আপন করে নিতে হবে। যত্ন নিতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে এটা কোনো সমস্যা নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, অটিজমসহ এনডিডি ব্যক্তির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সাধারণ বিমা করপোরেশনের সঙ্গে ট্রাস্ট যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা’ বাস্তবায়ন করছে। এ ছাড়াও এনডিডি ব্যক্তিকে প্রতিবছর এককালীন আর্থিক চিকিৎসা অনুদান প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার ইতোমধ্যে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করেছে। এর মাধ্যমে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তির গৃহভিত্তিক পরিচর্যা ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ৫৩টি জেলার ১৯০টি উপজেলার ৩৯০ জন পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৬০টি জেলার ১০৫টি উপজেলার ১১৫টি বিদ্যালয়ের ৪৫০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটি এখনও চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও ‘বলতে চাই’ ও ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ নামক দুটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহায়ক প্রযুক্তি হিসেবে ‘বলতে চাই’ অমৌখিক যোগাযোগ সহজ করবে। শিশুর অটিজম আছে সন্দেহ হলে সহজেই ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ অ্যাপ দ্বারা ঘরে বসেই অটিজম আছে কি না, তা জানা যাবে।
তিনি বলেন, এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় এ বছরই ১৪টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘অটিজম ও এনডিডি সেবা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে অটিজমসহ অন্যান্য এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিদেরকে জীবনচক্রের বিভিন্ন ধাপে সোশ্যাল ও মেডিকেল পদ্ধতির সমন্বয়ে ১৭ ধরনের বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হবে। মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম দ্বারা আন্তর্জাতিক মানের আর্লি ইন্টারভেনশনসহ এসব সেবা প্রদান করা হবে। এ কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এতিম, অভিভাবকহীন এনডিডি ব্যক্তির অভিভাবক নিয়োগ এবং তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সংগঠন নিবন্ধন নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ট্রাস্ট কর্তৃক গুচ্ছপদ্ধতিতে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রযুক্তিনির্ভর এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এ জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব শিশুদের মধ্যে অটিজমটা একটু কম আছে বা যারা মিশতে পারে তাদের সাধারণ স্কুলে বা যারা প্রতিবন্ধী সাধারণ স্কুলে ছোট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গেই যদি একসঙ্গে মানুষ করা যায় এবং বড় করা যায়, সবার সঙ্গে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে থেকে তারা কিন্তু নিজে থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠবে। সুস্থ হয়ে যায় তারা। তারা একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করতে শেখে, ঝগড়া করুক, বন্ধুত্ব করুক বা মারামারি করুক, যাই করুক তার মধ্যে দিয়েই কিন্তু তাদের ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র আলাদাভাবে ব্যবস্থা করলেই চলবে না। তবে হ্যাঁ যারা একেবারে বেশি মিশতে পারে না, তাদের জন্য আলাদা থাকবে। কিন্তু যত বেশি আমরা তাদের অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে সুযোগ করে দেব। তত দ্রুত তারা সুস্থতা লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অটিজমসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের হাতে পুরস্কারের সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী।
এবারের অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে আরটিভি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। আরটিভির পক্ষ থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ আশিক রহমান।
বিএ/
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল:- [email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০