রাবি প্রতিনিধি: ‘এ শুভ লগনে জাগুক গগনে অমৃতবায়ু, আনুক জীবনে নব জনমের অমল আয়ু’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন এক শুভ লগনে পৃথিবীতে অমৃতবায়ুর ছোঁয়া চেয়েছিলেন, আর সেই অমৃতবায়ুর ছোঁয়ায় তাঁর আকাঙ্খা ছিল নতুন এক নির্মল জীবন। তাঁর এই আকাঙ্খা বাণীর মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশ যেন ছেঁয়ে গেছে অমৃতবায়ুতে।
নবীনের মাঝে জীর্ণ ও শীর্ণ সবকিছুকে বিলীন করে দিয়ে, নব-আলোকের স্নানে যত পুরোনো আর মলিনকে ধুয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস সেজেছে এক নব জীবনের আলোর ঝলকানিতে। কারণ আজ শুক্রবার (৬ জুলাই) ৬৫ বছর শেষে ৬৬ বছরে পদার্পণ করেছে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।
প্রতি বছর এ দিনটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জেগে ওঠে নব আনন্দের আমেজে, ক্যাম্পাস সাঁজে জাকজমকপূর্ণভাবে। এবারও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় চলে বিচিত্র সাজসজ্জার আয়োজন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে প্রশাসন ভবন পর্যন্ত জায়গাটির চোখ ঝলমলে আলোকসজ্জা ও বিজলি বাতির বাহার
নবক্ষণের এক উৎসবমুখর পরিবেশের প্রমাণ দেয়। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, প্রশাসন ভবন, প্রধান ফটক ও শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন স্থাপনা, একাডেমিক ভবন এবং আবাসিক হলগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ছোঁয়া লেগেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিনে ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো জুড়ে দিচ্ছেন অনেকে। বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ওয়ালে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। অনেকেই স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ‘আবার যদি ফিরে যেতে পারতাম মতিহারের বুকে সবুজের ছায়ায় ঢাকা সেই ক্যাম্পাসে!’
দিবসটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানায় জমকালো কিছু আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এদিন সকাল ৯টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা ও ১৭টি আবাসিক হলের পতাকা উত্তোলন, বেলুন-ফেস্টুন-পায়রা উড়ানো ও বৃক্ষরোপনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের। এরপর হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বের হয় এক আনন্দ শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রা শেষে সিনেট ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয় সাময়িক আলোচনা সভা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকারের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ।
এসময় উপচার্য বলেন, রাবির ৬৬তম বছরে পদার্পণে আমরা আবেগে আপ্লুত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সুনামের সাথে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত আছে। সামনের দিনে আমরা আরো সফলভাবে এগুতে পারবো, আজকের দিনে এই আমার প্রত্যাশা।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়। একই বছরের ৬ জুলাই ড. ইৎরাত হোসেন জুবেরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি করে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সেই সময় পদ্মাপাড়ের বড় কুঠি ও রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬১ সালে বড় কুঠি থেকে নয়নাভিরাম মতিহারের এ সবুজ চত্বরে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। রাজশাহী শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত এ ক্যাম্পাসটি ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টর জমিতে স্থাপিত।
শুরুতে দর্শন, ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, গণিত ও আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি অনুষদের অধীনে ৫৮টি বিভাগ রয়েছে। তাছাড়া উচ্চতর গবেষণার জন্য রয়েছে ৫টি ইনস্টিটিউট। শিক্ষক রয়েছে প্রায় সাড়ে ১২শ এবং শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে ১৭টি।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/জেএন