নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ডাক্তার ভিজিট করেন বিভিন্ন ওষুধ ও পট কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রামেক হাসপাতালে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রায় দেড় শতাধিকেরও বেশি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজ করেন। এরা প্রতিদিন হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের কোম্পানির ঔষধ লেখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর এর জন্যও চিকিৎসকরা দামী দামী উপঢৌকন পেয়ে থাকেন ঔষধ কোম্পানির পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে বেক্সিমকো, স্কয়ার, এ্যারিস্টোফার্মা, অপসোনিন, অরিয়ন, ইনসেপটা, হেলথ কেয়ার, এসকে এফ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, একমি ও বিভিন্ন পট কোম্পানিসহ বিভিন্ন হারবাল এবং আরো অনেক কোম্পানির প্রতিনিধি চিকিৎসক ভিজিট করে থাকে।
ডাক্তার ভিজিটের জন্য রিপ্রেজেন্টেটিভদের সপ্তাহে দুইদিন সোমবার ও বুধবার দুপুর ১২ টা থেকে দুপুর ২.৩০ টা পর্যন্ত নিয়ম করে দিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক। কিন্ত রিপ্রেজেন্টিটিভরা হাসপাতাল পরিচালকের বেঁধে দেয়া নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে থেকে রাত পর্যন্ত ডাক্তার ভিজিট করেন। এরমধ্যে সকাল থেকে শুরু করে আউটডোর বন্ধ হওয়া পর্যন্ত এবং ইনডোরে সকাল দুপুর ও রাত তিন বারই ডাক্তার ভিজিট করেন। এতে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা তাদের প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে রোগী ও তাদের আত্মীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল বেলা দিকে হাসপাতাল আউটডোরের বিভিন্ন চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে গিয়ে দেখা যায় রিপ্রেজেন্টিটিভরা ভিড় জমিয়েছেন এবং আউটডোরের মুল গেটে ৩০/৩৫ জন রোগীদের ধরে ধরে ব্যবস্থাপত্র দেখছেন। কেউ দেখাত না চাইলে তারা টেনে হিঁচড়ে ব্যবস্থাপত্রগুলো দেখছেন।
এ ছাড়াও বহির্বিভাগের রেডিয়েশন এন্ড অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসকের চেম্বারে তিনজনকে বসে থাকতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরে সেখানে আরো তিনজন অবস্থান নেন। সেই সময়ে ডাক্তার রোগী দেখা বাদ দিয়ে তাদের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে হাসপাতাল বহির্বিভাগের এক ব্যক্তি জানান, বহির্বিভাগের আবাসিক সার্জনসহ ডাক্তাররাও তো জানেন যে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে রিপ্রেজেন্টিটিভদের সময় দেয়া যাবেনা। কিন্তু ডাক্তাররাও সে বিষয় এড়িয়ে তাদের সময় দিয়ে থাকেন। রিপ্রেজেন্টিটিভদের দেয়া পরামর্শ মতো ঔষধ লেখলেই তাদের হাতে পৌছে যায় নানা রকমের উপহার সামগ্রী। এরমধ্যে কলম, প্যাড, ঔষধ এবং বড় সার্জনের জন্য বড় ধরণের উপঢৌকন পৌছে যায় কোম্পানির পক্ষ থেকে। যার ফলে তারা তাদের দেয়া পরামর্শ মতো ঔষধ লিখে থাকেন।
ডাক্তারদের দেয়া ঔষধের ব্যবস্থাপত্রে মাঝে-মধ্যে এমনও ঔষধ লিখতে দেখা যায় যে ঔষধগুলো সারা বাজার খুজেও পাওয়া যায়না।
হাসপাতালের ইনডোরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রিপ্রেজেন্টিটভরা একই ভাবে চিকিৎসক ভিজিট করেন। তারা নির্ধারিত দিনের বাইরে ওয়ার্ডে গিয়ে ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাত করেন। এ সময় যদি কোন জরুরী রোগী আসেন তাহলেও তারা সেই রোগীর চিকিৎসা বাদ দিয়ে রিপ্রেজেন্টিটভদের সাথে গল্পে ব্যস্ত থাকেন। গত কয়েকদিন আগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একরোগী অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ করে আমার রোগীল অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে আমি কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে দৌড়ে যায়। সেখানে গিয়ে সমস্যার কথা জানালে ডাক্তার পরে আসছি বলেন। এর কয়েক মিনিট পরে আবার গেলে একই কথা বলে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন। অথচ তিনি সেই সময়ে একজন রিপ্রেজেন্টিটিভের সাথে গল্প করছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করে জানান।
এই রোগীর মত অনেক রোগীই রিপ্রেজেন্টিটিভদের অবাধ যাতায়াতের ফলে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ে তারা তাদের প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও তাদের নিয়ম-নীতির মধ্যে আনতে পারছেননা। এটা যেন হয়ে পড়েছে অসাধ্য কোন কাজ।
মাঝে-মধ্যে হাসপাতালের পুলিশ ও আনসার সদস্য তাদের ধরলেও তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়। ছাড়া পাওয়ার পরে আবার তারা পরের দিন একইভাবে হাসপাতালে আসেন। বর্তমান সময়ে হাসপাতাল পুলিশ বক্সের সদস্যরা কোম্পানীর প্রতিনিধিদের থেকে বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে তাদের ভিজিট করতে দেন। একই চিত্র আনসার সদস্যদের বেলায়।
এ বিষয় নিয়ে কয়েকজন সচেতন নাগরিকের সাথে কথা হলে তারা দাবী করেন, যতদিন না পর্যন্ত চিকিৎসক তাদের দায়ীত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে রোগীদের সুষ্ঠ সেবার কথা না ভাববেন এবং হাসপাতালে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজের দায়ীত্ববোধ নিয়ে কাজ না করবেন ততদিন এর ভাল সমাধান পাওয়া যাবেনা।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমানের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে