খবর২৪ঘণ্টা,আন্তর্জাতি ডেস্ক: টু-জি স্পেকট্রাম বন্টন কেলেঙ্কারির মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ভারতের সাবেক টেলিকম মন্ত্রী ও দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাঝাগাম (ডিএমকে) নেতা আন্দিমুথু রাজা বেকসুর খালাস পেয়েছেন। একই সাথে খালাস দেওয়া হয়েছে ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি সহ ১৬ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তিন সংস্থাকে। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে পাতিয়ালা হাউজ কোর্টে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই’এর বিশেষ আদালতে এ রায় দেওয়া হয়। সিবিআই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে না পারায় প্রত্যেককেই বেকসুর খালাস দেন আদালতের বিচারপতি ও.পি.সাইনি।
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিজয় আগরওয়াল জানান, ‘আদালত জানিয়েছে যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগই প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই নির্দোষ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়’।
এদিকে আদালতের এই রায়ে অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন এ.রাজা ও ডিএমকে প্রধান করুণানিধির কন্যা কানিমোঝি। এ.রাজা ও কানিমোঝি-দুই জনেই আদালতের এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে আদালতের রায়ের পরই দিল্লি ও তামিলনাড়ুতে উৎসবে মেতে ওঠেন ডিএমকে কর্মীসমর্থকরা। এই ইস্যুতে বিরোধীরাও সংসদেও সরকার পক্ষকে চেপে ধরেন। একসময় বিরোধীদের হট্টগোলে রাজ্যসভার অধিবেশন ভুন্ডুল হয়।
উল্লেখ্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনেক কম অর্থের বিনিময়ে ২০০৮ সালে বেশ কিছু সংস্থাকে দেশের তৎকালীন টেলিকম মন্ত্রী এ.রাজা টু-জি স্পেকট্রাম লাইসেন্স বন্টন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। যার ফলে সরকারি রাজস্ব ক্ষতি হয় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি রুপি। ওই স্পেকট্রাম বন্টন করে মরিশাসের একটি সংস্থার মাধ্যমে ঘুরপথে এ.রাজা ২০০ কোটি রুপি ঘুষ নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে। ২০১১ সালে ওই আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় আদালতে রাজা সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই।
ওই কেলেঙ্কারির দায়ে ২০১১ সালে ২ ফেব্রুয়ারি রাজাকে আটক করে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তারপরই তাঁর স্থান হয় তিহার জেলে। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি থাকার পর ২০১২ সালের মে মাসে জামিনে মুক্তি পান রাজা। ওই কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি, রাজার ব্যক্তিগত সচিব ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী আর.কে.চন্ডোলিয়া, সাবেক টেলিকম সচিব সিদ্ধার্থ বেহুরা, ডি.বি. গ্রুপের সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহিদ বালোয়ার-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠ। অভিযোগ ওঠে তিন টেলিকম সংস্থা রিলায়েন্স, ইউনিটেক এবং সোয়ান টেলিকমের বিরুদ্ধেও। ওই কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযুক্ত এ.রাজার বিরুদ্ধে ফৌজদারী ষড়যন্ত্র, জালিয়াতি, প্রতারনা ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। সমস্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২০/বি, ৪৬৮, ৪৭১, ৪২০ এবং ১০৯ ধারা সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। সিবিআই-এর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়, সোয়ান টেলিকম এবং লুপ টেলিকমকে সামনে রেখে বেআইনি স্পেকট্রাম বন্টন হয়েছিল।
স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় ওই আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে নাম জড়িয়ে যায় দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরম সহ অনেক শীর্ষ রাজনীতিবিদের নাম। ওই আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সেসময় উত্তাল হয়ে ওঠে ভারতের রাজনীতি। ওই ইস্যুতে সংসদের অধিবেশনও দিনের পর দিন ভুন্ডুল হয়ে যায়। বিরোধীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের ইস্তফারও দাবি তোলা হয়। সব মিলিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে তৎকালীণ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই আদালতের এই রায়ে কংগ্রেস শিবিরেও স্বস্তির হাওয়া বইছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ